কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে মানব মস্তিষ্কের সবচেয়ে বিস্তারিত বা পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করেছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও গুগল। ২০১৪ সালে ইপিলেপ্সি সার্জারির সময় এক রোগীর মস্তিষ্ক থেকে সরানো সেরিব্রাল করটেক্সের এক ঘন মিলিমিটার অংশের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
এক দশক ধরে জীববিজ্ঞানী ও মেশিন-লার্নিং বিশেষজ্ঞদের একটি দল মস্তিষ্কের এই ছোট টিস্যুর নমুনাটি বিশ্লেষণ করেছে। এই অংশ প্রায় ৫৭ হাজার কোষ ও ১৫ কোটি সিন্যাপসিস ধারণ করে। তাদের এই আবিষ্কার মস্তিষ্কের সংযোগ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এআই ম্যাপিং তৈরির কৌশল
এই ম্যাপ তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রথমেই একটি ভারী ধাতুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের টিস্যুকে রঞ্জক প্রলেপ দেওয়া হয়। এই ধাতুগুলো কোষের ভেতরের লিপিড মেমব্রেনের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত হয়। এই প্রলেপ টিস্যুর নির্দিষ্ট অংশগুলোকে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে।
ধাতুগুলো যুক্ত করার পর টিস্যুটিকে প্রথমে রেজিনে ভরা হয়। এরপর সেটিকে অত্যন্ত সূক্ষ্ম অংশ কাটা হয়। এখানে প্রতিটি স্লাইস বা টুকরো মাত্র ৩৪ ন্যানোমিটার (১০০ কোটি ভাগের এক ভাগের সমান) পুরু হয়।
উল্লেখ্য, ‘রেজিন’ একটি বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক, যা টিস্যুকে শক্ত ও স্থিতিশীল করে তোলে। ফলে টিস্যুটি সূক্ষ্মভাবে কাটা যায়। ৩৪ ন্যানোমিটার অত্যন্ত ছোট একটি পরিমাপ। ফলে টিস্যুর প্রতিটি স্তর খুবই পাতলা হয়ে যায়, যা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
ফলস্বরূপ মস্তিষ্কের সেলুলার গঠন সম্পর্কে প্রচুর তথ্য প্রকাশ করে মানচিত্রটি। এটি ৫০টিরও বেশি স্নায়ু সন্ধিসহ নিউরন শনাক্ত করেছে, যা আগের গবেষণাগুলোতে উপেক্ষা করা হয়েছিল ও কর্টিকাল প্রক্রিয়াকরণ বোঝার জন্য এসব তথ্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকল্পটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রয়েছে। যেমন ত্রুটিগুলো সংশোধন করার জন্য বিশাল পরিমাণ ডেটা ম্যানুয়ালি যাচাই করতে হয়। এ ছাড়া মানচিত্রের অচেনা ডিম-আকৃতির কাঠামো ও জটযুক্ত কোষ সম্পর্কে তথ্য এখনো জানা যায়নি। অস্বাভাবিকতাগুলো নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে। তবে এসব নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
মস্তিষ্কের মানচিত্রটি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফলে মানব মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণার জন্য নতুন পথ উন্মুক্ত করবে। এটি সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগ সম্পর্কে জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ অনুকরণ করে এআই আরও নতুন নতুন তথ্য জানাতে পারবে। ভবিষ্যতে এই জ্ঞানকে ইঁদুর ও মানুষের মস্তিষ্কের গবেষণায় কাজে লাগানো হবে। এর স্নায়ুবিজ্ঞান ও এর সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগতি হবে।
তথ্যসূত্র: ৩৬০ গ্যাজেটস