যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন আগামী ২০ জানুয়ারি। এর আগেই ট্রাম্পের মতাদর্শের সঙ্গে তাল মেলাতে নিজেদের বিভিন্ন নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছুদিন আগে ‘ফ্যাক্টচেকিং’ প্রোগ্রাম বন্ধ করে মেটা। এবার ‘ডাইভার্সিটি প্রোগ্রাম ও ইনক্লুসন (ডিইআই)’ প্রোগ্রাম বন্ধের ঘোষণা করছে মেটা ও আমাজন।
মেটা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ মোমো ‘এক্সিওস’ নামের একটি মার্কিন সংবাদপত্রের নাগালে আসে। এই মোমো থেকে জানা যায়, মেটা তার ডিইআই প্রোগ্রামগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও সরবরাহকারী নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত এবং এটি একটি ‘পরিবর্তিত’ আইনগত ও নীতিগত পরিস্থিতির কারণে হচ্ছে।
এক্সিওসের মতে, মেটার মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যানেল গেইল লিখেছেন, ‘মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, আদালতগুলো ডিইআই-বিষয়ক ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে চলেছে। ডিইআই শব্দটি এখন বেশ বিতর্কিত, কারণ কিছু মানুষের মতে, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কিছু গোষ্ঠীকে অন্যদের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়।
সব সিদ্ধান্ত মেটার একটি বৃহত্তর রক্ষণশীল মনোভাবের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ কোম্পানি সম্প্রতি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফ্যাক্টচেকিং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ইউএফসির প্রধান ডানা হোয়াইটকে তার বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা নতুন প্রশাসনের কাছ থেকে সুবিধালাভের উদ্দেশ্যে করা হতে পারে।
অন্যদিকে ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত অ্যামাজনের মেমো থেকে জানা যায়, তারা তাদের ডিইআই সম্পর্কিত পুরোনো প্রোগ্রাম এবং উপকরণগুলো বাতিল করছে।
কোম্পানিটি আরও বলেছে, ‘আমরা একক গ্রুপের জন্য আলাদা প্রোগ্রাম তৈরি করার পরিবর্তে প্রমাণিত ফলাফলভিত্তিক প্রোগ্রামগুলোর প্রতি মনোযোগ দিচ্ছি। সেই সঙ্গে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি তৈরির দিকে এগোচ্ছি।’
এ ছাড়া অ্যামাজন তাদের ওয়েবসাইট থেকে ‘কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্য সমতা’ এবং ‘এলজিবিটিকিউ প্লাস অধিকারের’ বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে নিয়েছে। মেটা ও আমাজন দুটি কোম্পানিই ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনী তহবিলে ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে, যা তাদের রক্ষণশীল অবস্থানকে আরও প্রমাণিত করে।
মেটার রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ট্রাম্প ও জাকারবার্গের সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল।
২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি মূল প্ল্যাটফর্ম ছিল ফেসবুক। তবে ২০২১ সালে সেই সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়, যখন সামাজিক মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্টগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেয়, কারণ তিনি ৬ জানুয়ারির মার্কিন কেপিটালে সংঘটিত বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীদের প্রশংসা করেছিলেন।
২০২৩ সালের মধ্যে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট পুনরায় সক্রিয় করে ফেসবুক।
এ বছরের শুরুতে ট্রাম্প তার বই ‘সেভ আমেরিকা’য় হুমকি দেন যে, তিনি জাকারবার্গকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়ার কথা ভাবছেন এবং প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন যে, প্রযুক্তি টাইকুন ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিলেন।
এ ধরনের পরিবর্তন শুধু প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ম্যাকডোনাল্ড, ওয়ালমার্ট, জন ডিরি, হারলি–ডেভিসনসহ অন্য বড় কোম্পানিগুলোও তাদের বৈচিত্র্য নীতিমালা সংশোধন করছে, যা আধুনিক সংরক্ষণবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য রেজিস্টার