পাহাড়ে ওঠার কথা শুনলেই কল্পনায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুর্গম পথ, ঘামঝরা শরীর আর শেষ পর্যন্ত চূড়ায় পৌঁছে যাওয়ার এক অমূল্য অভিজ্ঞতা। তবে যাঁদের গন্তব্য চীনের শানডং প্রদেশের ‘মাউন্ট তাই’য়ে, তাঁদের আর সেই সমস্ত শারীরিক কসরত করতে হবে না। কারণ, রোবটিক পা ভাড়া করে সহজেই পাহাড় চূড়ায় পৌঁছাতে পারবেন তাঁরা।
চীনের পাহাড় মাউন্ট তাইর উচ্চতা ৫ হাজার ফুট। এই উচ্চতায় উঠতে সিঁড়ির ৭ হাজার ধাপ পাড়ি দিতে হবে। এটি আরোহীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের ভিডিওতে মাউন্ট তাই নিয়ে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ভিডিও রয়েছে। এসব ভিডিও দেখা যায়, একগাদা ক্লান্ত পর্যটক মাউন্ট তাইয়ে উঠতে গিয়ে লুটিয়ে পড়ে। তবে রোবটিক পা নামক এক যন্ত্র পাহাড়ে ওঠার ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেবে।
চীনের ট্যুরিজম কর্মকর্তারা এবার রোবোটিক পা ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে বয়স্ক ও কম আত্মবিশ্বাসী পর্বতারোহীরা সহজেই পাহাড়ে চড়তে পারেন।
গত মাসের প্রথম দিনেই ২০০-এর বেশি পর্যটক প্রায় ৭০ ইউয়ান (প্রায় ৯ দশমিক ৫০ ডলার) দিয়ে এই রোবোটিক পা ভাড়া নিয়েছিলেন। চীনের তাইশান কালচারাল ট্যুরিজম গ্রুপের সহযোগিতায় এই রোবোটিক পা তৈরি করেছে কেনকিং টেকনোলজি নামক একটি শেনজেনভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি। মাত্র ৪ পাউন্ড (১ দশমিক ৮ কিলোগ্রাম) ওজনের এই ডিভাইসটি ব্যক্তির কোমর ও ঊরুর চারপাশে পরা হয়। ডিভাইসটির ব্যাটারি লাইফ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। রোবোটিক পা ব্যবহারকারীর চলাফেরায় একধরনের নমনীয়তা যোগ করে, যা তাঁদের ওঠানামা সহজ করে।
রোবটিক পা ব্যবহার করার পর একজন পর্যটক শিনহুয়া বলেন, ‘এটা সত্যিই কার্যকর। মনে হচ্ছিল যেন, কেউ আমাকে পাহাড়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে’।
অন্য একজন ব্যবহারকারী বলেন, ‘এটা অবশ্যই পাহাড়ে চড়ার বিষয়টি সহজ করেছে, তবে ডিভাইসটি থেকে পা বের করার পর একটু অদ্ভুত লাগছিল। মনে হচ্ছিল পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে।’
এই রোবোটিক পাগুলো এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে। তবে আগামী মাসের মধ্যেই এটি বাজারে পাওয়া যেতে পারে।
এই প্রযুক্তি কম শক্তি-সামর্থ্য বা বয়সী মানুষদের পাহাড় চড়তে সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে যেসব কাজে শারীরিক পরিশ্রম বেশি বা পায়ে বেশি চাপ পড়ে, সেসব কাজেও সাহায্য করতে পারবে এই প্রযুক্তি।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রোবোটিক পা উন্নয়নের কাজ করছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো আরও হালকা-পাতলা হবে। একটু আরও উন্নত প্রযুক্তি ও শক্তির সঙ্গে, হয়তো শিগগিরই অনেক বৃদ্ধ ব্যক্তিরাও তরুণদের মতো পাহাড়ে উঠতে পারবে এবং নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।