বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবী থেকে ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে দুই থেকে তিনটি কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব আছে। জ্যোতির্বিদদের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের কৃষ্ণগহ্বর হায়াডেস নক্ষত্রগুচ্ছের মধ্যে লুকিয়ে আছে। এটি সূর্য থেকে প্রায় ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
এই কৃষ্ণগহ্বরগুলো লাখ লাখ বছর আগে বৃহদাকার নক্ষত্রের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা মহাশূন্যে ঘুরতে শুরু করে। এগুলো আগে আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের কৃষ্ণগহ্বরের ১০ গুণ কাছাকাছি। হায়াডেস শয়ে শয়ে নক্ষত্র নিয়ে গঠিত গুচ্ছ। বৃষ নক্ষত্রমণ্ডলীতে এর দেখা মেলে। একই সময়ে একই গ্যাস ও ধুলার বিশাল মেঘ থেকে উৎপন্ন হায়াডেস। ফলে এর রাসায়নিক গঠন ও বয়সের মতো মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের কৃষ্ণগহ্বর শনাক্ত করতে ইতালির পদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টেফানো তর্নিয়ামেন্তির নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। দলটি হায়াডেসের ভেতর নক্ষত্রের গতিবিধি ও বিবর্তনের সিমুলেশন তৈরি করে। এতে কৃষ্ণগহ্বরের উপস্থিতিও নিশ্চিত করা হয়। বিজ্ঞানীরা সিমুলেশনের ফল আগের উন্মুক্ত নাক্ষত্রিক জনসংখ্যার বেগ এবং অবস্থান নিয়ে প্রকৃত পর্যবেক্ষণের সঙ্গে তুলনা করেন। তর্নিয়ামেন্তির ধারণা, কিছু কৃষ্ণগহ্বর যদি নক্ষত্রগুচ্ছের কেন্দ্রে থাকে, তাহলে সিমুলেশন হায়াডেসের প্রকৃত ভর এবং আকৃতি মিলে যেতে পারে।
গবেষক দলটি হায়াডেস পর্যবেক্ষণের বেশ কয়েকটি উপযুক্ত মডেল খুঁজে বের করে। এসব মডেলে দেখা যায়, হায়াডেসের ভেতর দুই থেকে তিনটি কৃষ্ণগহ্বর আছে। সিমুলেশনে নক্ষত্রগুচ্ছ থেকে যে কৃষ্ণগহ্বরগুলো ১৫০ লাখ বছর আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়, তার সঙ্গে ইউরোপীয় মহাকাশযান গায়ার তথ্যেরও বেশ মিল আছে।
নক্ষত্রগুচ্ছের বর্তমান বয়সের ৪ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ সাড়ে ৬২ কোটি বছর আগে যদি হায়াডেস থেকে কৃষ্ণগহ্বর বিক্ষিপ্ত হয়, তা-ও তারাদের আগের অবস্থান সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে। গবেষকেরা ব্যাখ্যা করেন, হায়াডেস থেকে এখন যদি কৃষ্ণগহ্বর আলাদা হয়, অস্থিতিশীল অবস্থা সত্ত্বেও এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে বলেই বিবেচিত হবে। সিমুলেশন অনুসারে দেখা যায়, কৃষ্ণগহ্বরগুলো হায়াডেসের ভেতরে না থাকলেও খুব কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান করছে।
নতুন গবেষণা এবং আগের কৃষ্ণগহ্বর আবিষ্কারে মহাকাশযান গায়ার অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০১৩ সালে মহাশূন্যে পাঠানোর পর জ্যোতির্বিদ্যা পাঠে নতুনত্ব নিয়ে এসেছে গায়া। মহাশূন্য টেলিস্কোপ জ্যোতির্বিদদের জন্য হায়াডেসের মতো বিশাল নক্ষত্রগুচ্ছের অবস্থান এবং বেগ নির্ণয় করা আরও সহজ করে তুলেছে। কোটি কোটি নক্ষত্রের অবস্থান ও গতি নিখুঁতভাবে নির্ণয় করতে সক্ষম গায়া। নির্ভুলভাবে গতিবিধি নির্ণয়ের ফলে নক্ষত্রের ওপর টানা মহাকর্ষীয় প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সেটা যত ক্ষুদ্র ও লুকানো কৃষ্ণগহ্বর থেকে আসুক না কেন।
স্পেনের বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক গিলেস বলেন, কৃষ্ণগহ্বরের উপস্থিতিতে নক্ষত্রগুচ্ছের বিবর্তন কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা এ ধরনের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়। আর তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বোঝা যায় কৃষ্ণগহ্বরে ছায়াপথের বিচরণ-প্রক্রিয়া।
সূত্র: স্পেস ডট কম