আধুনিক জীবনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডিভাইস হলো স্মার্টফোন। তবে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে। বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, আইফোনের চেয়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। তবে কিছু পদক্ষেপ নিলে অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও ব্যক্তিগত তথ্যে সুরক্ষা সম্ভব।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য নিচের ১১টি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
গুগল অ্যাকাউন্টের টু–ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে। এটি ডিভাইসে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেবে।
ফিচারটি যেভাবে চালু করবেন–
ক. অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে যে কোনো ব্রাউজারে https://myaccount.google.com/intro/security –এই পেজে যান। এরপর ডিভাইসে ব্যবহৃত গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করুন।
খ. এই সময় টু স্টেপ ভ্যারিফিকেশন অপশনটি নির্বাচন করুন ও পুনরায় পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন–ইন করুন।
গ. ‘ট্র্যাই ইট নাও’ অপশনে ট্যাপ করুন ও লগ ইনের জন্য স্ক্রিনে থাকা নির্দেশনা ফলো করুন। গুগল একটি ব্যাকআপ কোড দিলে তা সংরক্ষণ করুন।
এর মাধ্যমে গুগল অ্যাকাউন্টটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সঙ্গে যুক্ত হবে। অন্য কোনো ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে চাইলে মূল অ্যাকাউন্টধারীর অনুমতি লাগবে।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে শক্তিশালী পাসকোড ব্যবহার করুন। নিজের জন্মদিন, জন্মসালের মতো অনুমানযোগ্য সহজ পাসকোডের পরিবর্তে শক্তিশালী পাসকোড ব্যবহার করুন।
ফোনের পাসকোড সেট করার জন্য ফোনের সেটিংস থেকে সিকিউরিটি অপশন খুঁজে বরে করুন। এরপর স্ক্রিন লক অপশনে গিয়ে যথেষ্ট জটিল কোনো পাসকোড সেট করুন। স্ক্রিন লকের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস রিকগনিশন ব্যবহার না করাই ভালো।
প্রতিবার অ্যাপ ইনস্টলের সময় ফোনের মাইক্রোফোন, লোকেশন, ক্যামেরা, কন্ট্যাক্ট, গ্যালারির মতো বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ও সিস্টেমের অনুমতি চাওয়া হয়। এসময় না দেখেই সবকিছুর অনুমতি দিয়ে দেন অনেকে, এটি ঠিক নয়। কারণ এর মাধ্যমে অ্যাপগুলো আপনার ব্যক্তিগত ডেটায় প্রবেশাধিকার পায়। অসৎ কোনো প্রতিষ্ঠান অ্যাপের মাধ্যমে এই ডেটা সংগ্রহ করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে পারে।
যা করতে হবে
সেটিংসের প্রাইভেসি অপশনে যান। সেখান থেকে পারমিশন ম্যানেজারের প্রতিটি সেকশন লক্ষ্য করুন। প্রতিটি অ্যাপের যেসব পারমিশনের দরকার নেই সেগুলো বন্ধ করে দিন। এ ছাড়া সেটিংসে গিয়ে গুগলের লোকেশন হিস্ট্রিও বন্ধ করে দিন। তাহলে আপনার লোকেশন ডেটা সুরক্ষিত থাকবে।
অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপের অটোমেটিক আপডেট চালু রাখুন। কারণ এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোনের নিরাপত্তাত্রুটির সমাধান হবে।
অ্যাপের অটোমেটিক আপডেট চালু করতে যা করতে হবে:
ক. গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপের ডান পাশের কোনায় প্রোফাইল পিকচারে ট্যাপ করুন।
খ. সেটিংস অপশনটি খুঁজে বের করুন।
গ. সেটিংসের নেটওয়ার্ক প্রিফারেন্স থেকে অটো–আপডেট অ্যাপস অপশনটি চালু করুন।
ফোনের অপারেটিং সিস্টেম সাধারণত স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়। না হলে অ্যাবাউট অপশনে গিয়ে সফটওয়্যার আপডেট অপশনে ট্যাপ করুন।
ফোন হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ফিচার ডিভাইসের লোকেশন খুঁজে পেতে অনেক সাহায্য করবে। ফোনটি না পেলেও দূর থেকে ডিভাইসের ডেটা ডিলিট করা যাবে। ডিভাইসের সেটিংসের সিকিউরিটি অথবা প্রাইভেসি অপশন থেকে এই ফিচারটি চালু করা যাবে।
টেক্সট মেসেজ, ই–মেইল বা মেসেজিং অ্যাপের কথপোকথন অন্যের দৃষ্টি থেকে গোপন রাখতে লক স্ক্রিনে নোটিফিকেশন দেখানোর অপশন বন্ধ রাখুন। এ জন্য ফোনের সেটিংসে গিয়ে সেসব অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
গুগল ও অন্যান্য অ্যাপ গ্রাহকের অনেক ডেটা সংগ্রহ করে। কোম্পানিগুলো প্রতিটি গ্রাহকের বিপরীতে একটি অনন্য আইডি তৈরি করে। এই আইডি ব্যবহার করে সহজে গ্রাহকের পছন্দ অপছন্দ আগ্রহ অনুসরণ করা যায়। ফোনে পারসোনালাইজড বা ব্যক্তি নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনের অপশন চালু থাকলে এই ডেটা নেওয়া সহজ হয়। অনেক অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এই ডেটা অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রিও করতে পারে।
এই ফিচার বন্ধ করতে ফোনের সেটিংস থেকে প্রাইভেসি অপশনে যেতে হবে। এরপর অ্যাডস অপশনে ট্যাপ করে বিজ্ঞাপন আইডি ডিলিট করতে হবে।
অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করলে গুগলের ডেটা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায় না। গুগলের বিভিন্ন সার্ভিসের জন্য এই ডেটা সংগ্রহ করা হয়। তবে গুগল প্রাইভেসি চেকআপ ফিচার থেকে প্রতিটি সার্ভিসের প্রাইভেসি নীতিগুলো দেখা যায়। ওয়েব অ্যান্ড অ্যাক্টিভিটি, লোকেশন হিস্ট্রি, ইউটিউব সার্চ অ্যান্ড ওয়াচ হিস্ট্রি, গুগল ফটোজ সেটিংস, অ্যাড সেটিংসসহ গুগলের বিভিন্ন সার্ভিসের প্রাইভেসিগুলো কিছুদিন পরপর চেক–আপ করতে হবে।
অনেক অ্যাপে ক্যামেরা ও মাইক (মাইক্রোফোন) ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়। ব্যবহার না করলেও অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে ফোনের ক্যামেরা ও মাইক ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই অ্যাপগুলো ব্যবহার না করলে সাময়িকভাবে ক্যামেরা ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি বন্ধ করে রাখুন। সেটিংসে ক্যামেরা ও মাইক অপশন থেকে অ্যাপভিত্তিক এই অনুমতি বন্ধ করতে পারবেন।
ফোনের ক্লিপবোর্ডের অ্যাকসেস পেতে পারে অনেক অ্যাপ। তাই ক্লিপবোর্ডে সেভ করে রাখা পাসওয়ার্ড, ওয়েবসাইটের ঠিকানা, ছবি ও নোটও অ্যাপগুলো দেখতে পারবে। সেটিংসের প্রাইভেসি অপশন থেকে ক্লিপবোর্ড অ্যাকসেস চালু করতে হবে। এর ফলে যেসব অ্যাপ ক্লিপবোর্ডে প্রবেশ করবে, তার নোটিফিকেশন ডিভাইস দেখাবে। তবে অ্যাপের এই অ্যাকসেস বন্ধ করতে অ্যাপটি আনইনস্টল করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
গুগল মেসেজে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন অপশন চালু রাখার সুবিধা রয়েছে। গুগল মেসেজ অ্যাপ ব্যবহার করলেই শুধু এই সুবিধাটি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ মেসেজ আদান–প্রদানে দুই পক্ষকেই এই অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। মেসেজের ব্যানারে একটি লক আইকোন দেখা গেলে বোঝা যাবে মেসেজগুলো এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধার আওতায় আছে।
প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ফিচারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকে। তবে অপশনটি চালু না থাকলে গুগল মেসেজ অ্যাপের সেটিংসের চ্যাট ফিচারটি চালু করলেই হবে।
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস