আমাদের দেশে প্রচলিত যে সাক্ষাৎকারের প্র্যাকটিস তাতে আমি খুবই হতাশ ছিলাম। অধিকাংশ সাক্ষাৎকার একটা নিস্পৃহ প্রশ্ন উত্তর পর্ব, যেন জেরা করা হচ্ছে। যিনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তিনি খুবই সামান্য হোমওয়ার্ক করে এসেছেন। তো এসব হতাশা থেকেই আমি সাক্ষাৎকারের ধরনটা বদলাবার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে ইন্টারভিউ মানে ‘ইন্টার এক্সচেঞ্জ অব ভিউজ’। সাক্ষাৎকার হচ্ছে, যিনি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন এবং যিনি ইন্টারভিউ নিচ্ছেন দুজনের একটা যৌথ সৃষ্টি। তা ছাড়া, ইন্টারভিউয়ের একটা এসেন্স হচ্ছে কিউরিওসিটি। যার সাক্ষাৎকার নিতে যাচ্ছি তার ব্যাপারে আমার গভীর কৌতূহল থাকতে হবে।...আমি তাদেরই সাক্ষাৎকার নিয়েছি যাদের ব্যাপারে আমার কৌতূহল ছিল। যাদের সৃষ্টিকর্ম আমি মনোযোগের সঙ্গে পড়েছি, দেখেছি। আমি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাঁদের ভাবনা জগৎকে, সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছি। সৃজনশীল মানুষের ভাবনা জগৎটা কালো পর্দায় ঢাকা। আমার প্রশ্নগুলো বলতে পারেন একটা
একটা ছুরির আঁচড়, যা দিয়ে আমি এ কালো পর্দাটা ফুটো করে ভেতরের রহস্যটাকে দেখতে চেয়েছি।
একজন সৃজনশীল মানুষের ভাবনা জগৎটা জানতে পারলে তাদের সৃষ্টি কর্মটি কিন্তু আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ছাড়া এসব সাক্ষাৎকার নেওয়ার ব্যাপারে আমার একটা সেলফিস রিজনও ছিল বলতে পারেন। আমি নিজেও তখন লেখালেখি এবং শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে কাজ করবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। তো আমার পছন্দের সৃজনশীল মানুষদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি আমার নিজের সৃজনশীলতার প্রস্তুতিটাকে একটু মজবুত করার চেষ্টা করছিলাম। খুব বেশি লোকের সাক্ষাৎকার কিন্তু আমি নেইনি। এস এম সুলতান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক এদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বিদেশি ক’জনের সাক্ষাৎকারও নিয়েছি।
সূত্র: দূরগামী কথার ভেতর, শাহাদুজ্জামান, পৃষ্ঠা-২৪-২৫