মণি সিংহের নামটিই হয়ে উঠেছিল সংগ্রামের প্রতীক। বিপ্লবের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, মেহনতি মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার মতো বহু মহৎ মানবিক গুণের সমাহার ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। তাঁর সংগ্রামী জীবন ব্যাপ্ত ছিল ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ কালপর্বে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, টঙ্ক ও তেভাগা আন্দোলনের নেতা।
মণি সিংহের জন্ম ১৯০১ সালের ২৮ জুন নেত্রকোনার সুসং-দুর্গাপুরে। তাঁর দাদা ছিলেন জমিদার। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য কলকাতায় যান। সেখানে গিয়ে ১৯১৪ সালে তিনি ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘অনুশীলন’ দলে যোগ দেন। এক দশক সেখানে সক্রিয় থাকার পর ১৯২৫ সালে যোগ দেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে।
১৯২৮ সালে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে কেশরাম কটন মিলে শ্রমিকদের ১৩ দিনব্যাপী ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়ে দাবি আদায়ের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রথম সফলতা অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে গ্রেপ্তার হয়ে আট বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে জন্মস্থানে ফিরে আসেন। এখানে এসে তিনি আবার কৃষকদের সংগঠিত করে টঙ্ক প্রথার বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। এই আন্দোলন সশস্ত্র রূপ নিলে পাকিস্তান সরকার ১৯৫১ সালে টঙ্ক প্রথা বাতিল করে এবং মণি সিংহের ওপর হুলিয়া জারি করে তাঁর সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে নেয়।
দেশভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন মণি সিংহ।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর আজীবন এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর লড়াইয়ের গল্প উঠে এসেছে ‘জীবন সংগ্রাম’ নামের আত্মজীবনীতে।
১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।