গত শতকের পঞ্চাশের দশকে যে তরুণদের হাতে এ দেশের শিল্পের বড় ধরনের পালাবদল ঘটে, সেই প্রজন্মেরই একজন প্রধান শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। বাংলাদেশের চিত্রকলায় নদী-নিসর্গের আলো-অন্ধকার নিরীক্ষণ করে আর মানুষের দেহের অন্ধিসন্ধির জ্ঞান আহরণ করে যাঁরা তালিম নিয়েছিলেন গুরুশিল্পী জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমদসহ বিখ্যাত শিল্পসারথিদের কাছে, তাঁদেরই এক অগ্রগামী শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। এ দেশের বিমূর্ত চিত্রকলার অন্যতম শিল্পী ছিলেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১ নভেম্বর সাতক্ষীরার তেঁতুলিয়া গ্রামে। তাঁর কৈশোর কেটেছে নিজ গ্রামের আলো-হাওয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক পাস করে তিনি দীর্ঘদিন নিজেকে নিয়োজিত রাখেন একজন ‘ফুলটাইম’ চিত্রকর হিসেবে। এরপর ১৯৫৮ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের ফেলোশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে ঘুরে সেখানকার শিল্পধারার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে।
পাকিস্তান আমলে টেলিভিশনে খবর পড়তেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আটকা পড়েন পাকিস্তানে। ১৯৭৩ সালে দালালের মাধ্যমে পালিয়ে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং সেখানে চারুকলা বিভাগ চালু করেন। তিনিই প্রথম দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রাম্যমাণ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন শুরু করেন। তাঁর উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমীতে দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক শিল্পকলা প্রদর্শন শুরু হয়।
সৈয়দ জাহাঙ্গীরের সৃষ্টিকর্মের বেশির ভাগই গ্রাম এবং গ্রামের প্রকৃতি নিয়ে। প্রকৃতি এবং ঋতু পরিবর্তন ছিল তাঁর ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর বিখ্যাত প্রদর্শনী ও সিরিজের নাম হচ্ছে ‘আত্মার উজ্জীবন’, ‘উল্লাস’, ‘ধ্বনি’, ‘অজানা অন্বেষা’। শিল্পীর নানা চিত্রকর্মের মধ্যে ‘আত্মার উজ্জীবন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এটিতে ফুটে উঠেছে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালের বিভিন্ন ঘটনা।
তাঁর আত্মজীবনী হলো ‘আত্মপ্রতিকৃতি: স্মৃতির মানচিত্র’ বইটি। বিখ্যাত ‘সমকাল’ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন তাঁর বড় ভাই।
২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের নিজের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।