ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কৃষ্ণনগরে কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের দ্বারোদ্ঘাটন হবে। সেখানে অন্যদের মধ্যে আমন্ত্রিত হয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার কথা আব্বাসউদ্দীন আহমদ, সোহরাব হোসেন ও বেদারউদ্দিন আহম্মদের। পাকিস্তান হওয়ার আগে এই এলাকার এসডিও ছিলেন এন এম খান। সে সময় তিনি এখানকার অনেক উন্নতি করেছিলেন। তাই এলাকার জনগণ তাঁকে খুব পছন্দ করত। তিনিও এসেছেন আমন্ত্রিত হয়ে।
সে সময় বাংলার গ্রামে গ্রামে আব্বাসউদ্দীন ছিলেন জনপ্রিয়। তাঁর গান ছিল বাঙালির প্রাণের গান। শেখ মুজিবুর রহমান বলছেন, ‘বাংলার মাটির সঙ্গে ছিল তাঁর নাড়ির সম্পর্ক।’
আলোচনা সভা হলো দিনে, সন্ধ্যায় বসল গানের আসর। তিন গায়কই গান গাইলেন।
এটা চল্লিশের দশকের শেষ দিককার কথা। সে সময়ও কেউ জানে না, শেখ মুজিবুর রহমান পরবর্তীকালে হয়ে উঠবেন বঙ্গবন্ধু, হয়ে উঠবেন জাতির পিতা। সে সময় শেখ মুজিবুর রহমান লোকসংস্কৃতির শক্তি উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনি সেই গানের অনুষ্ঠানের পরের দিনের কথাও লিখেছেন। সেদিন সবাই মিলে নৌকায় করে ফিরছিলেন। আশুগঞ্জ থেকে ট্রেন ধরবেন। পুরো পথেই চলল গান। মধ্যমণি আব্বাসউদ্দীন আহমদ। এ ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান দিচ্ছেন এক গভীর উপলব্ধির ভাষ্য, ‘নদীতে বসে আব্বাসউদ্দীন সাহেবের ভাটিয়ালি গান তাঁর নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটা দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গাইতেছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলোও যেন তাঁর গান শুনছে।’
প্রখ্যাত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন যে কতটা রাজনীতিসচেতন ছিলেন, সেটা বোঝা যায় সে সময় তাঁর বলা কথায়। তিনি তাঁর গানের ভক্ত তরুণ নেতা শেখ মুজিবকে বলেছিলেন, ‘মুজিব, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলা রাষ্ট্রভাষা না হলে বাংলার কৃষ্টি, সভ্যতা সব শেষ হয়ে যাবে। আজ যে গানকে তুমি ভালোবাস, এর মাধুর্য ও মর্যাদাও নষ্ট হয়ে যাবে। যা কিছু হোক, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতেই হবে।’
সূত্র: শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১১০-১১১