শাহরিয়ার আহমেদ
‘এ ছেলের কোনো দিন লেখাপড়া হবে না! পড়াশোনায় একেবারে মনোযোগ নেই!’ শিক্ষকদের এমন মন্তব্য শুনে অসন্তুষ্ট হলেন মা। তিনি জানতেন, ছেলে তাঁর অসাধারণ মেধাবী; একদিন সে বড় কিছু হবেই।
তিনি ছেলেকে নিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলেন। নিজেই পড়াতে শুরু করলেন।
আসলে গতানুগতিক পড়াশোনা ছেলেটার কাছে বিরক্তিকর মনে হতো। দৈনন্দিন বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানের চিন্তা মাথায় ঘুরত ছেলেটার। কিশোর বয়সে তার খেলা ছিল ল্যাবরেটরি বানানো। এর মধ্যে কত রকমের বোতল, তার, ভাঙা যন্ত্রপাতির টুকরো।
একটু বড় হয়ে ছেলেটা বুঝতে পারল, হাতে-কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গবেষণাগার প্রয়োজন; যার জন্য চাই টাকা।
তাই ১৩ বছর বয়সে নিজে কাজ জোগাড় করে ফেলল; ট্রেনে খবরের কাগজ বিক্রি! মা-বাবার কোনো আপত্তি টিকল না।
অল্পদিনেই কিছু টাকা জমিয়ে ফেলল সে। সিদ্ধান্ত নিল, নিজেই পত্রিকা বের করবে। পুরোনো একটা ছোট্ট প্রেসও পেয়ে গেল।
শুরু হলো সংবাদ সংগ্রহ করা, সম্পাদনা করা, পত্রিকা ছাপানো এবং বিক্রি। সবকিছু একাই! তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর।
একদিন সে স্টেশনে দাঁড়িয়ে খবরের কাগজ বিক্রি করছিল। দেখল, একটি শিশু রেললাইনের ওপর খেলা করছে। ওয়াগন এগিয়ে আসছে। সে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুটিকে উদ্ধার করল।
শিশুটি ছিল স্টেশনমাস্টারের একমাত্র পুত্র। স্টেশনমাস্টার তাকে পুরস্কৃত করতে চাইলেন।
কিন্তু ছেলেটির শুধু গবেষণায় আগ্রহ।
নিজের জন্য ট্রেনের একটি কামরা চেয়ে নিল সে। আর সেখানেই ছোটখাটো একটি গবেষণাগার বানিয়ে ফেলল। এখান থেকেই শুরু হলো তার গবেষণার কাজ।
আজ তোমরা সুইচ টিপলেই আলো জ্বালতে পারো, দেড় শ বছর আগে তা ছিল কল্পনার অতীত। বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কারের পেছনে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। শুধু বৈদ্যুতিক বাল্ব নয়, ছোট-বড় হাজারের বেশি আবিষ্কার আছে তাঁর। এত সৃজনশীল বিজ্ঞানী পৃথিবীতে আর কেউ নেই।
তিনি বলতেন, ‘প্রতিভা নয়, পরিশ্রমই মূল কথা।’
তাঁর নাম টমাস আলভা এডিসন।