প্রায় দেড় বছর পর পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার পরও বান্দরবানে আশানুরূপ পর্যটক আসছে না।
করোনাকালে মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং এখনো সংক্রমণভীতির কারণে এই অবস্থা চলছে বলে জানালেন এর সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী নেতারা। এদিকে বান্দরবান শহরে হোটেল ও পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন পর্যটকেরা।
শহরে পালকি হোটেলের মালিক জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন শাহরিয়ার। গত এক মাসে চার-পাঁচ দিন তাঁর হোটেলের সবগুলো রুম বুকিং হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটন খুলেছে প্রায় দুই মাস। বান্দরবানে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ পর্যটক আসছেন না।
জেলা সদরে সমিতির তালিকাভুক্ত ৫৮টি হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ছাড়াও অনেক আবাসিক হোটেল আছে। অধিকাংশ দিন এসব প্রতিষ্ঠানের আসন পর্যটকপূর্ণ হয় না।
আলাউদ্দিন শাহরিয়ারের মতে, মানুষের মধ্যে এখনো করোনাভীতি রয়ে গেছে। এ ছাড়া গত দেড় বছরে মানুষের আয়-রোজগার কম হয়েছে। তাই আগ্রহ থাকলেও অনেকে ব্যয় নির্বাহ করতে না পারায় ঘুরতে কম বের হচ্ছেন।
মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বান্দরবানে পর্যটনের অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। আগে এসব স্থানে যেভাবে পর্যটক আসতেন, এখন সে তুলনায় আগমন কম হচ্ছে। এতে তাদের কাঙ্ক্ষিত আয় হচ্ছে না।
বান্দরবানে আসা একাধিক পর্যটক বলেন, শহরে আবাসিক হোটেলে ঢাকা-চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্টের চেয়েও চড়া ভাড়া নেওয়া হয়, কিন্তু সেবার মান তেমন ভালো নয়। অধিকাংশ হোটেলেই খাবারের ইচ্ছেমতো দাম আদায় করা হয়।
পর্যটক জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহ আলম ও সাইফুল গত মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, কুয়াকাটা, সিলেট, চট্টগ্রামের পতেঙ্গার তুলনায় বান্দরবান শহরে খাবার, পরিবহন ভাড়া তুলনামূলক বেশি। একই ধরনের অভিযোগ করে নুর আলম, আনোয়ার হোসেন ও সফিকুল ইসলাম জানান, বান্দরবান সদরে বেড়ানোর প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ কমে আসছে।
বান্দরবানে হোটেল ব্যবসায় যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আজকের পত্রিকার কাছে স্বীকার করে বলেন, বান্দরবানে পর্যটনকেন্দ্রিক পরিবহনের ভাড়া তুলনামূলক বেশি, রেস্টুরেন্টগুলোতেও খাবারের দাম বেশি নেওয়া হয়। এতে পর্যটকদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা জেলা শহরের চেয়ে উপজেলা পর্যায়ে বেড়ানোর প্রতি বেশি আগ্রহী।
রেস্টুরেন্ট ও পরিবহনে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বান্দরবান শহরের পর্যটন খাত মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
গতকাল বুধবার সকালে বান্দরবান শহরের বাস স্টেশন এলাকার (হিলবার্ড এলাকা) জিপ, মাহেন্দ্র, হাইয়েস, নোয়া স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া জন্য অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। বেলা ১১টা পার হলেও অনেক চালক ভাড়াই পাননি।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাহেন্দ্র চালক বলেন, পর্যটকের চাপ বাড়লে এমনটা হয়, আবার ‘অফ সিজনে’ কম ভাড়াতেও পর্যটক বহন করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
পর্যটন কেন্দ্রিক পরিবহন খাতের সঙ্গে যুক্ত নুরুল কবির বলেন, পর্যটক কম হওয়ায় তারা ভাড়া কম পাচ্ছেন। এতে করে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণও কঠিন হয়ে পড়েছে।
জেলা রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গতকাল বলেন, পণ্যের দাম দর্শনীয় স্থানে টাঙিয়ে রাখার জন্য বলা আছে। তবে কিছু হোটেলে হয়তো তা টাঙানো নেই। খাবারের মান ভেদে দাম বেশি নেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে খাবারের দাম বেশি নেওয়া হয় না বলে দাবি করেন সমিতির সহসভাপতি ও জাফরান রেস্টুরেন্টের মালিক বদিউল আলম।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাশ বলেন, হোটেলে, মোটেল, রেস্টুরেন্ট এমনকি পরিবহন ভাড়ার তালিকাও দর্শনীয় স্থানে রাখা প্রয়োজন। তাহলে পর্যটক আর মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ঝগড়া হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তিনি সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতের বিকাশের লক্ষ্যে সকলে মিলে সহনীয় দাম নির্ধারণের আহ্বান জানান।