টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানি বেড়ে ফেনীর মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিন স্থানে ভেঙে অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ শুক্রবার (২ জুলাই) সাড়ে ১১টার দিকে পরশুরামের শালধর এলাকায় মুহুরি নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর এলাকায় কহুয়া নদীর বাঁধের একটি অংশে ভাঙন দেখা দেয়। বিকেল সাড়ে ৪ টারদিকে মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগরের বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গত মাসে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরি নদীর বাঁধে একাধিক স্থানে ভেঙে অন্তত ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পরবর্তী ভাঙনের স্থানগুলো নামমাত্র মেরামত করায় আবারও এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরি ও কহুয়া নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরশুরামের শালধরে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে। বিকেল ৪টার দিকে কহুয়া নদীর পানি বেড়ে টেটেশ্বরে আরেকটি বাঁধ ভেঙে যায়।
ঘটনাস্থলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহারিয়ার বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বেড়ে বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনের আশঙ্কা আছে এমন স্থানগুলোতে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলমান আছে। বৃষ্টি বাড়লে আরও বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে।
বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, বিকেল ৪টার পর সাতকুচিয়া ও টেটেশ্বর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। ইতিমধ্যে সাতকুচিয়া, বাঘমারা, টেটেশ্বর ও চাড়িগ্রাম প্লাবিত হওয়ায় অন্তত ৩৬৫ পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তথ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
মির্জানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনীয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহ লী কর্মকর্তা ১০০ পরিবারের জন্য শুকনো খাবার দিয়েছেন। আমরাও ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করছি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর ফেনীর উচ্চ পর্যবেক্ষক সালেহ আহাম্মদ বলেন, ‘ফেনীতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার, ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার ও ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিনও ফেনী মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’