কক্সবাজারের উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিবারের সঙ্গে থাকেন রজিমা বেগম (২২)। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অসহায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে রজিমাও একজন। এখন নিজের হাতে বানানো পোশাক বিক্রি করে চালাচ্ছেন ছয় সদস্যের পরিবার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার উখিয়ার ৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উইমেন মার্কেটে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় নারী মেলা। মেলায় রোহিঙ্গা নারীরা বিক্রেতা, আবার এসব পণ্য কিনছেন অধিকাংশ রোহিঙ্গা নারীই।
কামিজ, কাঁথা, রোহিঙ্গা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকসহ হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছিলেন রজিমা। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রান্তিক উন্নয়ন সোসাইটি পরিচালিত ‘রোহিঙ্গা উইমেন অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’, সংক্ষেপে রওয়ার সদস্য। সংগঠনটি রোহিঙ্গা নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে।
রজিমা বলেন, ‘প্রান্তিকের মাধ্যমে আমরা সেলাই প্রশিক্ষণ পেয়েছি। গত তিন বছর ধরে এখন নিজেরা পোশাক বানিয়ে বিক্রি করছি। এই মার্কেটে আমাদের দোকানও আছে, আজকে মেলাতেও কাপড় বিক্রি করতে পেরে ভালো লাগছে।’
প্রান্তিকের নারী ক্ষমতায়ন প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার একরামুল কবির জানালেন, ‘২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ওব্যাট হেলপারস ইউএসএর সহযোগিতায় আমরা স্থানীয় ও রোহিঙ্গা নারীদের কর্মদক্ষ করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। আমাদের রওয়ায় ৯৭ জন রোহিঙ্গা নারী সদস্য আছে, যাদের বানানো পোশাক আজ এখানে বিক্রি হচ্ছে।’
জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউএন উইম্যানের অর্থায়নে ব্র্যাক-এর ‘উইম্যান এমপাউয়ারমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত উইমেন মার্কেট গত তিন বছর ধরে নারী দিবসকে সামনে রেখে এই মেলার আয়োজন করছে। শুধু প্রান্তিক উন্নয়ন সোসাইটিই নয় এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কাজ করা ২১টি বিভিন্ন সংস্থার স্টল।
সকাল ৯টায় এই মেলার উদ্বোধন করেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৫-এর ক্যাম্প ইনচার্জ মাহফুজার রহমান। মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখে তিনি জানান, ‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে রোহিঙ্গা নারীরা এখন আগের তুলনায় অনেক সচেতন এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে এই জনগোষ্ঠীর নারী সদস্যের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাঁরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন।’
মেলার আয়োজক উইমেন মার্কেটের ব্যবস্থাপক শেফালী বেগম বলেন, ‘এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য “টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য” কে ধারণ করে আমরা আয়োজন করছি এই মেলা। ২১টি স্টলে রোহিঙ্গা নারীদের বানানো বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত এবারের মেলায় ক্রেতাসমাগম ভালোই।’
বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে ব্যতিক্রমী এই মেলার।