সাগরপারের শহর কক্সবাজার থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ল রাজধানী ঢাকা অভিমুখে। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩১ মিনিটে ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’।
কক্সবাজার থেকে প্রথম বাণিজ্যিক বিরতিহীন ট্রেন কক্সবাজার এক্সপ্রেস রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কথা রয়েছে। এই যাত্রাপথে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ২০ মিনিট বিরতি দেওয়ার কথা।
সকাল ১০টা থেকে ট্রেনটি ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। যাত্রীরা আগেভাগেই স্টেশনে এসে ভিড় জমান। কক্সবাজার শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সরকারি কলেজের বিপরীতে চান্দের পাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন। ঝিনুকের আদলে নান্দনিক কারুকাজে তৈরি এই স্টেশনে যাত্রীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। দুপুর ১২টায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর এ ট্রেনের উদ্বোধন করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজারে কর্মরত ইখতিয়ার উদ্দিন বায়েজিদ স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকায় যাবেন। কক্সবাজার থেকে প্রথম ট্রেনের যাত্রী হিসেবে তিনি গর্ববোধ করছেন। ইখতিয়ার উদ্দিন বায়েজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বাবা-দাদারা যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা আমাদের সময়ে এসে পূরণ হয়েছে।’
ঢাকা থেকে আসা কলেজশিক্ষক নাজমা আক্তার বলেন, ‘ট্রেন ভ্রমণ খুবই পছন্দের। কক্সবাজার থেকে ট্রেনে ঢাকায় যাচ্ছি—এই অনুভূতি অন্য রকম। এখন থেকে মন ছুটলেই সমুদ্রসৈকতে আসা যাবে।’
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রেল যোগাযোগের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজারের আমূল পরিবর্তন আসবে। পর্যটকেরা স্বচ্ছন্দে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপদে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে। টহল টিমের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।’
রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হলো। ২০টি বগিতে ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে আন্তনগর এই ট্রেন কক্সবাজার থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচল করবে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে।’
এদিকে কক্সবাজার রুটে প্রথম দিনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল কমলাপুর থেকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান।
‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিতে শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা। স্নিগ্ধা (এসি সিট) শ্রেণিতে ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অন্যদিকে যেসব যাত্রী চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাবেন, তাঁদের শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬, এসি সিট ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ৬৯৬ টাকা।
এর আগে ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চলের) এসিওপিএস মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ট্রেনের নাম, যাত্রীর ধারণক্ষমতা ও ট্রেনের নম্বর জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, ট্রেনটি ঢাকা থেকে সোমবার এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।