খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু। রীতি অনুযায়ী সকালে দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে ফুল ও হাতে বোনা নতুন কাপড় ভাসিয়ে হারি বৈসু উদ্যাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরের বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি নেন তারা। বৈসু উৎসব চলবে তিন দিন।
আজ চৈত্রের ভোরের প্রথম আলোয় দেবী গঙ্গার উদ্দ্যেশে ফুল ভাসানোর জন্য জড়ো হয় ত্রিপুরা নারীরা। পরে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনা-রিসাই পরে অংশ নেয় এই উৎসবে। বন থেকে সংগ্রহ করা মাধবীলতা, অলকানন্দ, জবাসহ বিভিন্ন ধরেন ফুল দিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ–গ্লানি মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে পূজা করেন তারা।
এ সময় নিজেরদের হাতে বোনা ছোট্ট কাপড় ভাসানো হয় জলে। ত্রিপুরা পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্রের মাসের ২৯ তারিখে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। ফুল ভাসানোর এ উৎসবের অংশ নিতে পেরে খুশি ত্রিপুরা নারীরা।
হারি বৈসুতে অংশ নেওয়া রীতি ত্রিপুরা ও তুলিকা ত্রিপুরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা খুব সকালে ফুল সংগ্রহ করি। পরে আমরা নদীতে এসে ফুল ভাসিয়ে দিই। এ সময় জলে গঙ্গা দেবীর পূজা করি। এখানে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই খুশি। কারণ বছরে একবার মাত্র এই ধরনের উৎসব হয়।’
গায়ত্রী ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি। অনেক বছর পর আমি এ ধরনের উৎসবে অংশ নিয়েছি। খুবই ভালো লাগছে হারি বৈসুর এই উৎসবে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে।’
এদিকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এই উৎসব দেখতে পর্যটকরাও যোগ দিয়েছে। এমন বর্ণিল আয়োজন দেখে মুগ্ধ তারা।
ঢাকা থেকে আসা সাবরিনা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি প্রথম এমন সুন্দর একটা আয়োজন দেখেছি। খুবই ভালো লাগছে পাহাড়ের মানুষের প্রাণ এই উৎসব দেখে। পাহাড়ের মানুষ সব সময়ই এমন ভালো থাকুক।’
বৈসু উদ্যাপন কমিটির সদস্য দীনা ত্রিপুরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূলত নারীদের অংশগ্রহণের নতুন বছর বরণের এই হারি বৈসু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিপুরা নারীদের অনেকেই রিনা রিসাই (নিজেদের এতিহ্যবাহী পোশাক) বুনন করে।, নতুন বছরেও পোশাক বুননে যাতে দক্ষতা আরও নিপুণতা আসে সে জন্যই ফুলের সঙ্গে ভাসানো হয় হাতের বোনা ছোট্ট কাপড়। তাদের বিশ্বাস, এতে গঙ্গা দেবীর আশীর্বাদে বুনন কাজে তারা আরও দক্ষ হয়ে উঠবেন।’