২০১৬ সালে ৩৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়। এতে সহকারী পুলিশ সুপার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন রাঙামাটি জেলার দুর্গম জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগীছড়া গ্রামের মায়াচান চাকমার ছেলে শোভন চাকমা। এ খবরে দুর্গম জুরাছড়ি ছাড়িয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন টিকেনি। কারণ, তাঁর যোগদান আটকে দেওয়া হয়।
গেজেটে নাম না আসার কারণ জানতে স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে যান শোভন। যেখানে গিয়ে জানতে পারেন, স্থানীয় এমপি দীপংকর তালুকদার চাননি তাঁর নাম গেজেটে আসুক।
হতাশাগ্রস্ত হয়ে কিছুদিন রাঙামাটিতে স্থানীয় একটি এনজিওতে কনসাল্টেন্সি করেন শোভন। পরে অভিমান করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ২০১৮ সালে দেশ ছাড়েন শোভন চাকমা। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন শোভন।
৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৪ আগস্ট ১৪ বছর ধরে বিসিএস বঞ্চিতদের তালিকা প্রকাশ করলে তালিকায় শোভনের নাম উঠে আসে। এ খবরে নতুন করে আবারও উচ্ছ্বাস বাড়ে পাহাড়ে। অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দন বার্তায় ছড়িয়ে দেয় পাহাড়ের মানুষ। কিন্তু এ আনন্দের মাঝে শোভন চাকমা আজকের পত্রিকা’কে জানান তিনি এ পদে যোগদান করবেন না।
শোভন বলেন, ‘আমার জীবন থেকে আটটি বছর চলে গেছে। আট বছর আগে যে গতি নিয়ে আমার দেশের সেবা করার কথা ছিল, সেখানে আমি এখন আরেকটি দেশকে নিজের দেশ বানিয়েছি। অস্ট্রেলিয়া সরকার আমাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে। আমার সবটুকু পরিশ্রম চিন্তাচেতনা আমার বর্তমান দেশকে নিয়েই। আমার নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি যোগদান করব না।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাই এরপর যে সরকার আসুক না কেন, কোনো প্রকার চাকরিতে যেন আমার মতো কাউকে বঞ্চিত করা না হয়। দেশের সেবা করার যে স্পিরিট, সেটি যেন নষ্ট করে দেওয়া না হয়।’
বঞ্চনার কারণ জানতে চাইলে শোভন চাকমা বলেন, ‘আমি স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য পাওয়ার পর আমি রাঙামাটি সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের কাছে যাই। কিন্তু দীপংকর তালুকদার আমাকে সহযোগিতা বা পথ দেখানোর পরিবর্তে অপমান করেন। আমাকে যে অপমান করেছে, সেটা সেদিন উপস্থিত অনেকে দেখেছে। কুরুচিপূর্ণ বাক্য ব্যবহার করে সন্তু লারমার বাড়িতে পড়ে থাকতে পরামর্শ দিয়েছিল দীপংকর তালুকদার। আমি খুব অপমানিত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘হাসিনা সরকার আমাকে নিয়োগ দিলে আমি হয়তো তাঁর বিরোধী হতাম না, বরং অনুগত হতাম। আমারমতো আরও ২৫৯ জনকে বিরোধী পক্ষ বানিয়েছিল হাসিনা সরকার। অথচ এদেরকে ঘিরে আজ হাজার হাজার হাসিনার বিরোধী পক্ষ তৈরি হয়েছে। কারণ, আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমাদের মেধা ও শ্রমের অবমূল্যায়ন করেছে হাসিনা সরকার।’
শোভন চাকমা ২০০৪ সালে জুরাছড়ি ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম ওমরগণি এম ই এস কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
আরও খবর পড়ুন: