শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত গাজীপুরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আজ সোমবার থেকে কর্মীদের ছুটি দিয়েছে। ফলে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে। অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীর তুলনায় যানবাহনের সংকট তো আছেই; যানবাহনের ওঠার পরেও যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপে উভয় পাশে প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনের গতি বাড়াতে কাজ করছে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
গাজীপুরের শিল্প পুলিশের সূত্রমতে, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানাসহ ছোট-বড় পাঁচ হাজারের বেশি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে অধিকাংশ ছুটি হয়েছে আজ। বেলা ১১টার পর থেকেই কারখানাগুলোতে ছুটি শুরু হয়।
শ্রমিকেরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। তাঁরা ছুটি পেয়েই গোছানো ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। একসঙ্গে দুটি মহাসড়কেই বেড়েছে যাত্রীদের চাপ, দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট ও যানজট। ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রীর চাপ আজ রাত অবধি বাড়তে থাকবে।
সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দুই মহাসড়কেই দুপুর পর্যন্ত যাত্রী ও যানবাহন ছিল স্বাভাবিক। তবে দুপুরের পর বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানায় বেতন-ভাতা দিয়ে ছুটি ঘোষণা করার পর হঠাৎ মহাসড়কে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়।
এদিকে হঠাৎ করে যাত্রীদের ঢল নামায় যানবাহনের সংকট তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যানবাহন না পেয়ে নারী, শিশুসহ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অনেক শ্রমিক স্ত্রী, সন্তান ও মালপত্র নিয়ে মহাসড়কের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যানবাহন পাচ্ছেন না। অনেকে নিরুপায় হয়ে খোলা পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে বেশি ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুপুরের পর গাজীপুরের কোনাবাড়ী, শফিপুর এলাকায় কয়েকটি পয়েন্টে যাত্রীর চাপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। এ মহাসড়কের কালিয়াকৈরের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এখানেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছি। গাড়িতে উঠতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে স্ত্রী না থাকলে ট্রাক বা পিকআপে চড়ে চলে যেতাম।’
ফারুক নামের আরেক শ্রমিক জানান, জয়দেবপুর এলাকার স্প্যারো অ্যাপারেলসে কাজ করেন। বেলা ১১টায় বেতন ও ছুটি পেয়ে বহু কষ্টে চন্দ্রা এসেছেন। এখন পরের গন্তব্যের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন।
দুপুরের পর থেকেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় আলিম উদ্দিন স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। গাড়িতে উঠতে পারছি না।’
শেরপুরের বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে মা আছেন। আমরা দুজন প্রায় এক ঘণ্টা হবে দাঁড়িয়ে আছি। গাড়ি পাচ্ছি না।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগরা, বোর্ড বাজার, গাজীপুরা, টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় ধীরে ধীরে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। এ মহাসড়কে যানবাহনের সংকট থাকলেও জয়দেবপুর এলাকা পেরিয়ে গেলে মহাসড়কে তেমন যানজট নেই।