দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা আটকে রাখার পর সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে ছেড়ে দিল কলাবাগান থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় এই সমাজকর্মীর নামে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন। মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা খেলার মাঠ দখল নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ করছিলেন এই নারী। স্থানীয়রা বলছেন, এই মাঠে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান সৈয়দা রত্না নামে মামলার প্রস্তুতি ও পরে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার সকালে তেঁতুলতলা মাঠ থেকে রত্নাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে সৈয়দা রত্না ফেসবুক লাইভে গিয়ে ওই মাঠটি দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। এ সময় কয়েকজন সাদা পোশাকধারী এবং পোশাকধারী পুলিশ তাঁকে লাইভ করতে নিষেধ করেন। এর পরপরই ওই পুলিশ সদস্যরা তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং তাঁকে টেনে হিঁচড়ে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে নেন।
সৈয়দা রত্নার লাইভের একটি অংশসহ এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একই ঘটনায় সমাজকর্মী সৈয়দা রত্নার ছেলেকেও আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
রত্নাকে গ্রেপ্তার ও মামলা হওয়ার বিষয়ে তাঁর মেয়ে সৈয়দা শাহগুফতা অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ শুধু তাঁর মাকে নয়, ভাইকেও আটক করে রেখেছেন। তাঁর ভাইয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে।’
রাতে রত্নার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী মামলার খোঁজ পাওয়া গেলেও সকাল থেকে আটকের বিষয়ে কোনো কিছুই বলেনি কলাবাগান থানা-পুলিশ। রত্নার ছেলের হাজতে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ওই ছেলেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা সেই সম্পর্কে কলাবাগান থানার পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে তারকাঁটার বেড়া দেয় পুলিশ। এ মাঠে কলাবাগান থানার নতুন ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। তবে মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে কলাবাগান ও এর আশপাশের এলাকার ছেলে-মেয়েদের খেলার জায়গা হিসেবে পরিচিত। খেলার মাঠটি রক্ষায় বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল শিশু-কিশোররা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেঁতুলতলা মাঠটি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২০ সালের দিকে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা না করেই ওই মাঠে ‘কলাবাগান থানার জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রতিবাদের মুখে তখন সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হলেও চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মাঠ ঘিরে দেওয়া হয়। বসানো হয় পুলিশ পাহারা।