এক বছর আগে নিখোঁজ হন সাভার পৌর এলাকার ইমান্দিপুরের তোফাজ্জল হোসেন টোটন নামের এক পোশাকশ্রমিক। তাঁকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে পাশের এলাকা আনন্দপুরে চিহ্নিত মাদক কারবারি স্বপন মিয়ার বাড়িতে সোমবার (১০ জুন) অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ স্বপনের ঘরে কয়েক ঘণ্টা খোঁড়াখুঁড়ি করে লাশ না পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অভিযান স্থগিত করে। মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে লাশের সন্ধানে আবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগরে স্বপনের আরেক বাড়ির পাশ থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় সীমা বেগম নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পোশাক শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেনের চাচা ব্যবসায়ী ওসমান গনি বলেন, ‘আমার ভাতিজা ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে বাসায় বাজার (তরকারি) পৌঁছে দিয়ে ঘুরতে বের হয়। এরপর আর সে বাড়ি না ফেরায় গত ২০ এপ্রিল সাভার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। কিন্তু প্রায় দুই মাসেও পুলিশ তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
ওসমান গনি আরও বলেন, ‘আমাদের পাশের এলাকা আনন্দপুরের স্বপন মিয়া ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে মাদকের কারবার করে আসছিল। আমার ভাতিজা তোফাজ্জল এসবের প্রতিবাদ করত। মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় নিখোঁজের আগের দিন ১৮ এপ্রিল আমার ভাতিজা ও এলাকার ছেলেদের সঙ্গে স্বপন ও তার সহযোগীদের মারামারি হয়। আমার ধারণা, ওই ঘটনার জের ধরেই স্বপন আমার ভাতিজাকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ তার ঘরের মেঝেতে পুঁতে রেখেছে। পুলিশ সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বপনের ঘরের মেঝেতে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এর আগে পুলিশ স্বপনকে আটক করেছে বলে শুনেছি।’
পুলিশ জানায়, স্বপন মিয়া এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারি। ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল গত ১৩ মে অভিযান চালিয়ে স্বপন মিয়ার আনন্দপুরের বাড়ি থেকে ৩০০টি ইয়াবা বড়িসহ বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হামিদ মিয়া ও স্বপনের স্ত্রী পপি আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। স্বপন মিয়ার খনিজনগরের প্রতিবেশী সীমা বেগম তাঁদের গ্রেপ্তারে সহায়তা করেছিলেন। ওই ঘটনার ১৯ দিন পর গত ২ জুন সীমা বেগম নিখোঁজ হন। গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) স্বপনের খনিজনগরের বাড়ির পাশ থেকে মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় সীমার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ‘সীমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে প্রথমে সাইফুল ইসলাম নামে স্বপনের এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সীমার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর পাওয়া আরও তথ্যের ভিত্তিতে তোফাজ্জল হোসেনের লাশ উদ্ধারে স্বপন মিয়ার বাড়িতে আজ (সোমবার) অভিযান চালানো হয়।’
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব আরও বলেন, ‘তোফাজ্জলকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে স্বপনের ঘরে কয়েক ঘণ্টা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। লাশ না পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অভিযান স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার সকালে লাশের সন্ধানে আবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে।’