রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের ক্যাফে কুইন মার্কেট ভবনটি বিস্ফোরণের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনের সামনের দিকের ৯টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটি স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে কাজ করবে রাজউকের টেকনিক্যাল টিম। তবে এখনো ভবনটির কোনো নথির খোঁজ পায়নি রাজউক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলিস্তানের ওই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশনের (রাজউক) টেকনিক্যাল টিমের আহ্বায়ক ও রাজউকের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম কাজ হলো ভবনটিকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনা। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং এসেসমেন্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভবনটি ভাঙা হবে নাকি সংস্কার। কারণ আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে ভবনটি যেনো হুড়মুড় করে ভেঙে না পড়ে। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে কী করা হবে। কারণ ভেতরে ঝুঁকি থাকায় ফায়ার সার্ভিস কাজ করতে পারছে না। তবে সাপোর্ট পিলার কিংবা পাইপ দিয়ে ভবনের ওজন ছড়িয়ে দিতে পারলে সবাই নিরাপদে কাজ করতে পারবে। পানির লাইন নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচুর পানি জমছে। সবকিছু মিলিয়ে ভবনটি স্থিতিশীল করতে পারলে সব ধরনের কাজ করা যাবে।’
ভবনটির ৯টি কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবনের ২৪টি কলাম বা পিলার রয়েছে। এর মধ্যে সামনের দিকের ৯টি পিলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো পিলারের গোড়ার ঢালাই সরে গেছে। রড বেকে গেছে। ৩৩/ ৫৩ ফিটে ভবনটি ২ হাজার ৭০০ স্কয়ার ফিটের ভবনটি অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি স্থিতিশীল করতে যে যন্ত্রপাতি দরকার, রাজউকের সেগুলো আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার জন্য বেশি যন্ত্রপাতির দরকার নেই। আমাদের টেকনিক্যাল টিম এসেছে। আমরা আজই স্থিতিশীল অবস্থায় আনার জন্য কাজ শুরু করব। এক দিনের মধ্যেই করা সম্ভব। নির্মাণসামগ্রী এলেই আমরা কাজ শুরু করব। এই ভবন যদি ভাঙতে হয়, তাহলেও আগে কলামগুলো ঠিক করে স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে হবে। কারণ, আপনারা জানেন যে ভবন ওপর থেকে ভাঙতে হয়।’
‘বেসমেন্টের ৯টি পিলার ছাড়া অন্য পিলার আপাতদৃষ্টিতে ঠিক মনে হয়েছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে আগে স্থিতিশীল অবস্থায় এলে তারপর অন্য বিষয়গুলো দেখা যাবে। ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের বিষয় আছে।’
ভবনের নির্মাণসংক্রান্ত নথি পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ভবন কত সালে নির্মাণ হয়েছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। একবার জানা গেছে, ৮৫ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পরে আবার জানা গেছে ৮০ সালে। সব মিলিয়ে আমরা নথিপত্র খোঁজার কাজ করছি। কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি।’
রাজউকের এই কমিটি মূলত টেকনিক্যাল কমিটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো ভবনটির সর্বশেষ অবস্থা জানা। ব্যবহার করা যাবে কি না। সেটা নিয়েই কাজ করছি। আমাদের কমিটিতে বুয়েটের দুজন শিক্ষক আছেন। ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আছেন। এ ছাড়া রাজউকের কর্মকর্তারা আছেন। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং এসেসমেন্ট করে সিদ্ধান্ত দিতে পারব। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসে, আমরা সেটা সুপারিশ করব। কারণ এটা মানুষের মূল্যবান সম্পদ। এটা তৈরি করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। সব মিলিয়ে যেটা ভালো হবে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত জানাব।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে এর সামনের রাস্তা খুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক যে সাপোর্ট দেব, তাতে যদি নিরাপদ মনে হয় তাহলে রাস্তা ছাড়ার সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ এটা অনেক ব্যস্ত সড়ক। গাড়ি চলাচল করলে একটা ভাইব্রেশন সৃষ্টি হবে। কারণ রাজউক চায় না মানুষ ভোগান্তিতে থাকুক। আজ কিংবা আগামীকাল (শুক্রবার) বসে আমরা এই সিদ্ধান্ত জানাব।’