Ajker Patrika

জ্বলে না চুলা, ইফতারি তৈরিতে হিমশিম রাঁধুনি

  • রমজানে লোডশেডিং ঠেকাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে বেশি।
  • শিল্প, কলকারখানায়ও গ্যাস সরবরাহ আগের তুলনায় বেড়েছে।
  • সহজে কাটছে না গ্যাসের সংকট।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৭: ৩৬
বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে টান পড়েছে বাসাবাড়ির গ্যাসের চুলায়। চুলায় গ্যাস না থাকায় সেহরির খাবার ও ইফতারি তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন গৃহিণীরা। সম্প্রতি যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে টান পড়েছে বাসাবাড়ির গ্যাসের চুলায়। চুলায় গ্যাস না থাকায় সেহরির খাবার ও ইফতারি তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন গৃহিণীরা। সম্প্রতি যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রমজানে মানুষকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি থেকে মুক্ত রাখার অঙ্গীকার করেছেন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। লোডশেড মুক্ত রাখতে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া শিল্প, কলকারখানায়ও গ্যাস সরবরাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। আর এতেই টান পড়েছে বাসাবাড়ির গ্যাসের চুলায়। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে গ্যাসের সংকট। চুলায় গ্যাস না থাকায় সেহরির খাবার ও ইফতারি তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন গৃহিণীরা।

রাজধানীর গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ তাদের প্রধান অগ্রাধিকার। সে কারণে এই গ্যাস-সংকট সহজে কাটছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের যতখানি গ্যাসের চাহিদা, তার থেকে কম পাচ্ছি। সে কারণে কোথাও কোথাও সমস্যা হচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়লে সংকট কেটে যাবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বনশ্রী, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন এলাকা, মিরপুরের পল্লবী, উত্তর যাত্রাবাড়ী, মধ্য বাসাবো, দক্ষিণ বনশ্রী, কাফরুল, শুক্রাবাদ, কাঁঠালবাগান, পান্থপথ, হাতিরপুল, তেজগাঁও, উত্তরার কোথাও কোথাও গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ থাকে না। যেটুকু থাকে, তাতে রান্না করা যায় না।

রাজধানীর শুক্রাবাদে বাজারের গলিতে থাকেন সফিউল্লাহ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একা মানুষ। অফিসের কাজ সেরে রান্না নিজেই করি। রমজান শুরু হতেই গ্যাসের চাপ নেই। ইফতারি ও সেহরির রান্না করতে পারি নাই। হোটেলের খাবার এনে সেহরি করেছি।’

কলাবাগান এলাকায়ও একই পরিস্থিতি। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠের গলিতে থাকেন ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, রমজানের শুরু থেকে গ্যাসের চাপ নেই। এতে ইফতারি বানাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তিনি অবশ্য বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রিক চুলা নিয়ে কাজ সারছেন বলে জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রকৌশলীরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রীষ্ম শুরু হয়নি। ফলে এসির ব্যবহার বাড়েনি। এবারের গ্রীষ্মে বড় লোডশেডিংয়ে পড়বে দেশ। রমজানে বিদ্যুতের চাহিদার পুরোটাই উৎপাদন করছি আমরা। আর এই বিদ্যুতের বড় অংশ গ্যাস থেকে আসছে। দৈনিক গড়ে ৯০ থেকে ৯৫ কোটি কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। বর্তমানে দৈনিক গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট।

পেট্রোবাংলার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, দৈনিক ২৫০ কোটি থেকে ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। প্রকৃত চাহিদা রয়েছে ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুতে দেওয়া হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এরপরেই শিল্পে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তিতাস এলাকায় গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ কোটি ঘনফুট। সেখানে তিতাসকে দেওয়া হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়েই মানুষের বাসাবাড়িতে গ্যাসের টান পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত