গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) চিঠি জাল করার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমির হামজার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
কারণ দর্শানোর এই নোটিশে দলীয় আদর্শ ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তা না হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষ নেতা।
জানা গেছে, রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ করতে সড়কের দুই পাশের গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কাটার জন্য ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদ গত ১০ এপ্রিল সামাজিক বন বিভাগের ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠি ছাত্রলীগের সভাপতি ছোটন সংগ্রহ করে ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নামের স্থানে জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ বসিয়ে জাল চিঠি তৈরি করেন। গাছ কাটার টেন্ডার নিতে তিনি চিঠি জাল করেন।
এদিকে চিঠিটি গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের হাতে পৌঁছালে তিনি চিঠি সম্পর্কে ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে মৌখিকভাবে জানতে চান। ইউএনও ওই চিঠি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাননি বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে জানান। পরে গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের নির্দেশে ইউএনও তদন্ত করেন। পরে ছাত্রলীগের সভাপতির চিঠি জাল করার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের সভাপতি ছোটন জাল চিঠির দায় স্বীকার করে ইউএনওর কাছে লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘ছোটনের বিরুদ্ধে পদ-পদবি ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে নানা সময়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তিনি অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হালে তাঁর জন্য ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট হবে।’
গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা বলেন, ‘দলীয় আদর্শ ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। নোটিশে তাঁকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাঁর জবাব পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘চিঠি জাল প্রমাণিত হওয়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি ছোটন লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাঁর এই মুচলেকার কপিসহ আমি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’
তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর থেকে ফরিদপুর সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিটি কীভাবে ছাত্রলীগ নেতা সংগ্রহ করেছেন, সে বিষয়ে বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদ।