অস্বাভাবিক বেড়েছে বেকারি পণ্যের কাঁচামালের দাম। এতে বেড়েছে সব ধরনের বেকারি পণ্যের দামও। এদিকে কাঁচামালের দাম বাড়ায় খোলাবাজারেও নতুন নতুন ব্র্যান্ডের নামে বিভিন্ন স্থানে কাঁচামাল বিক্রি হচ্ছে, যেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও নেই কোনো তদারকি। মান নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও নীরব। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের বেকারি পণ্যের কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা জানান, পাউরুটি ও বিস্কুট তৈরিতে ব্যবহৃত বেকিং পাউডারের মসলা বা টার্টারের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। চার-পাঁচ মাস আগেও প্রতি কেজি টার্টারের দাম ছিল ১০৮ থেকে ১১২ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। ১০ কেজির ইস্টের প্যাকেটের দাম ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। টেস্টিং সল্টের প্রতি পাউন্ডের দাম ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে। একইভাবে বেড়েছে নারকেল ও সাইট্রিক অ্যাসিডের দাম। আগে আমদানি করা নারকেলের ২৫ কেজির বস্তার দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে তা ৪ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সাইট্রিক অ্যাসিডের ২৫ কেজির বস্তার দাম ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ তো গেল বেকারিতে ব্যবহৃত বিশেষ কিছু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির বিষয়। একই সময়ে বেড়েছে বেকারি পণ্যের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ময়দা, চিনি, সয়াবিন তেল ইত্যাদির দাম। সব মিলিয়ে বেকারি পণ্যের কাঁচামালের বাজার এমন দশায় গেছে যে, অনেকেই এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বেকারি ও কনফেকশনারি প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা জানান, রুটি, বিস্কুটসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরির প্রতিটি উপাদানের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। বিশেষ করে চিনি, সয়াবিন তেল, ময়দা ও বিভিন্ন উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।
এ অবস্থায় খোলা বা নতুন নামে নানা উপকরণ বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে, যার মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বেকারি কাঁচামাল বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বস্তা বা ড্রামে কাঁচামাল আমদানির পর সেখানে নানা ধরনের উপকরণ মিশিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ডে প্যাকেটজাত করে এসব উপকরণ বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে দাম হাঁকছেন একেকজন একেক রকম। এসব দেখার জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কিংবা পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নজরদারি করছে না। ফলে বাজারে যে যার মতো করে এসব উপকরণ বিক্রি করছে। শুধু তা-ই নয়, নানা ধরনের কৃত্রিম সুগন্ধিও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। বিক্রির সময় এগুলোকে ‘ফুড গ্রেড’ বলা হলেও, তা নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ, এসব সুগন্ধি বা রঙের প্যাকেটে নেই মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো সিল।
এ প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) নূরুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিএসটিআই সাধারণত তৈরিকৃত পণ্যের গুণ-মান দেখে। তবে যেসব উপকরণ ব্যবহার নিষিদ্ধ, সেগুলো যাতে ব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্যদ্রব্য তৈরির উপকরণও দেখভাল করছে।
তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কোনো পরীক্ষাগার নেই। ফলে খাবার তৈরির উপকরণ পরীক্ষার কোনো সক্ষমতা তাদের নেই। এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (খাদ্য শিল্প ও উৎপাদন) ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমাদের কোনো ল্যাব নেই। তাই খাদ্যসামগ্রী তৈরির উপকরণ পরীক্ষার কোনো উপায় আমাদের নেই।’