ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুটি অংশ। সেই সঙ্গে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা।
আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে সমবেত হয় শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষ। এর একটি অংশের নেতৃত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র সংসদ ইউনিয়ন, অন্য অংশকে নেতৃত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ।
পরে মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান গ্রহণ করে। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, রোজার মাসে মানুষের যেন কষ্ট না হয়, এ জন্য দ্রুত অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে সাংবাদিক শামসের মুক্তি রোববারের মধ্যে না হলে আবার আন্দোলন করা হবে।
অবরোধকালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭ ব্যাচের ছাত্র সুদীপ্ত দে বলেন, ‘শামস ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, আমাদের অগ্রজ ছিলেন। একজন সাংবাদিক হিসেবে তিনি বিভিন্ন ঘটনা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই কাজ করতে গিয়েই তিনি রাষ্ট্রের রোষানলে পড়েছেন। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। ৫০ বছর পার হলেও এই স্বাধীনতা এখনো নিশ্চিত হয়নি।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সহসভাপতি ও জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ফেরদৌস বলেন, ‘মাছ-ভাতের স্বাধীনতা তুলে ধরা কি অপরাধ? দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির সংবাদ প্রকাশের কারণে শামস ভাইকে আজকে জেলে যেতে হয়েছে। একজন সাংবাদিক, যিনি দেশের মানুষের কথা বলেন, তাঁকে রাতের আঁধারে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। এই সরকারকে ধিক্কার জানাই; সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এই সরকারের আচরণ স্বৈরাচারী আচরণ ছাড়া কিছুই নয়।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহসম্পাদক তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, ‘স্বাধীনতার নামে কী হচ্ছে আমাদের দেশে? একটি রাষ্ট্রের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের একটি চিত্র। এই সামান্য একটি প্রতিবেদন করার ফলে একজন সাংবাদিককে রাতের আঁধারে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া লজ্জাজনক। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে একজন সাংবাদিককে এভাবে চোরের মতো তুলে নেওয়া হচ্ছে এই দেশের স্বাধীনতা!’
এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কাজ করতে পারে, সে জন্য নিরাপত্তা দিতে এসেছি। যেন কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে আমাদের তৎপরতা রয়েছে।’
অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছিলাম, যাতে তাদের সঙ্গে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। সেখানে গিয়ে রমজানের দিনে জনমানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করতে বলায় তারা বিবেচনায় নিয়ে অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছে। অবরোধের ইস্যুটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রই এটার সমাধান করবে। আইনসম্মতভাবেই সমাধান হবে।’