গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
জিনে মানুষ তুলে নিয়ে পরে ফেরত দিয়ে গেছে, জিন মানুষের ওপর ভর করেছে, আবার কখনো কখনো জিনে গাছের ডাল ভেঙে চলে গেছে এমন কত ধরনের গল্প, কাহিনি নানি-দাদিদের মুখ থেকে ছোটকাল থেকেই শুনে এনেছেন অনেকেই। তবে সম্প্রতি জিনে জোর করে বাচ্চা প্রসব করিয়ে প্রেসক্রিপশনসহ চুরি করে নিয়ে গেছে এমন একটি অভিযোগ ওই সব গল্প-কাহিনিকেও হার মানিয়েছে। যদিও পরে বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য।
ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওদা মটমুড়া গ্রামে।
ওই নারীর বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় ছয় বছর আগে তার মেয়ে আজমিরা খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার খাসমহল গ্রামের ছহির উদ্দিনের ছেলে মোকাদ্দেস আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর কাজের সুবাদে সৌদি আরবে পাড়ি জমায় মুকাদ্দেস আলী। ছয় বছরের সংসার জীবনে একাধিকবার ছুটিতেও এসেছে জামাতা মোকাদ্দেস আলী। শেষবার প্রায় দশ মাস আগে ছুটি কাটিয়ে সে আবারও প্রবাসে ফিরে যায়। জামাতা বিদেশে যাওয়ার তিন মাস পর মেয়ে গর্ভবতী জানতে পেরে তাকে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গর্ভধারণের প্রায় চার মাস পর মেয়ে আজমিরা খাতুন তার পরিবারকে জানায় তার শোয়ার ঘরের মধ্যে দুটি সাপ দেখতে পেয়ে সাপ দুটিকে মেরে ফেলে। এরপর থেকে জিন প্রতিশোধ নিতে গর্ভের বাচ্চাকে মেরে ফেলা হবে বলে তাকে রাতে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে।
জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, গত রোববার বেলা ১১টার দিকে আজমিরা খাতুনের প্রসব ব্যথা উঠেছে বুঝতে পেরে তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। আজমিরা খাতুন জানায় গোসল করে তারপরে ডাক্তারের কাছে যাবে। এ কথা বলে তোয়ালে নিতে সে গোসলখানায় যায়। ফিরতে দেরি দেখে তার মা ঘরের দিকে এগিয়ে যান। গিয়ে ভেতরের দিক থেকে দরজা বন্ধ দেখতে পান। ডাকাডাকির একপর্যায়ে দরজা খুলে দেওয়া হয়। মা ভেতরে ঢুকেই মেয়েকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিতে থাকেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তার গর্ভে সন্তান নেই। এরপর থেকেই জিনে জোরপূর্বক প্রসব করিয়ে বাচ্চা ও প্রেগনেন্সি টেস্টের রিপোর্টগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে বলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাজহারুল ইসলাম বলেন, আজমিরা খাতুন গর্ভবতী অবস্থায় দুটি সাপ মেরেছিল। সে কারণেই হয়তো জিনেরা ছেলেকে নিয়ে গেছে এমন ঘটনা শুনতে পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যায়। সেখানেই ইউএনও মহোদয় ও ডাক্তার এসেছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তা ছাড়া তার শরীরের হাতে, পায়ে ও গলায় নখের আঁচড়ের দাগ দেখা গেছে।
সংবাদ পেয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হবে বলে জানান তারা।
এদিকে পরিবারের লোকজন আজমিরা খাতুনকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেরিয়ে আসে প্রকৃত তথ্য। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে তিনি গর্ভবতী ছিলেন না বলে জানান গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেছে আজমিরা খাতুন আদৌও গর্ভবতী ছিলেন না। এলাকায় আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে যে ঘটনায় সেটা ছিল সম্পূর্ণটাই কাল্পনিক।