বাগেরহাট সদরের বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক (৮০)। আজ সোমবার বেলা ১১টায় চিতলী-বৈটপুর এলাকায় উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যানিকেতনে জানাজা শেষে কবির লাশ দাফন করা হয়। এর আগে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে কবির মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোনজামাই শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল হক, বোন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক, ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধসত্ত্ব রফিক, লেখক অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধা, সামছউদ্দিন নাহার ট্রাস্টের প্রধান সমন্বয়ক সুব্রত কুমার মুখার্জিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও কবির গুণগ্রাহীরা কবির শেষ বিদায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রিয় কবিকে হারিয়ে শোকাহত তাঁর স্বজনেরা। কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক বলেন, ‘আমাদের আট ভাইবোনের মধ্যে রফিক ভাই সবার বড় ছিলেন। তিনি শুধু আমাদের বড় ভাই ছিলেন না, সবার অভিভাবক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা অভিভাবকশূন্য হলাম।’ ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ জুগিয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন কবি মোহাম্মদ রফিক।
কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট সদরের বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছউদ্দিন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক ছিলেন বড়। মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কাটে বাগেরহাটে। ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকার নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন মোহাম্মদ রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন।
পাকিস্তানের সামরিক আদালত মোহাম্মদ রফিককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু এমএ পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
কবি ঢাকায় থাকলেও এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পৈতৃক ভিটায় সব ভাইবোন মিলে সামছউদ্দিন-নাহার ট্রাস্ট নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। কবি মোহাম্মদ রফিক ছিলেন সামছউদ্দিন-নাহার ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি আমৃত্যু এর সদস্য ছিলেন।