Ajker Patrika

২৬ বছরপূর্তির অনুষ্ঠানে বক্তারা: ‘উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে না পারা রাষ্ট্রের দুর্বলতা’

­যশোর প্রতিনিধি
যশোরের টাউন হল ময়দানের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা হয়। আজ বৃহস্পতিবার যশোর উদীচীর কার্যালয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের টাউন হল ময়দানের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা হয়। আজ বৃহস্পতিবার যশোর উদীচীর কার্যালয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘যশোরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলায় ১০ জনকে হত্যার ঘটনার বিচার হয়নি। বিচার করতে না পারা রাষ্ট্রের একটি দুর্বলতা। সেই দুর্বলতার সুযোগেই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো তাদের বিস্তার ঘটিয়েছে। ২৬ বছর ধরে বিচারহীনতার আবর্তে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি।’ যশোরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলার ২৬ বছরপূর্তিতে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ‘এসো প্রতিবাদী এসো সংগ্রামী বলো হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’ স্লোগানে এ স্মরণসভার আয়োজন করে সংগঠনটি।

সংগঠনের যশোর কার্যালয়ের সভাকক্ষে স্মরণসভায় স্মৃতিচারণা করেন ওই বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস। ঘটনার সময় তিনি স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এখন তাঁর বয়স ৪৫ বছর।

সুকান্ত দাস বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরে সেই আওয়ামী লীগ আরও চারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এত বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের বুলি দিয়ে যারা বছরের পর বছর ক্ষমতায়, তারা বিচার করতে পারেনি। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়, সরকারের পর সরকার যায়, কোনো সরকারই বিচার করতে পারেনি। যেকোনো সরকারই সদিচ্ছা দেখালে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হতো।’

উদীচী যশোর সংসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু বলেন, ‘উদীচী প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। তাই উদীচীর ওপরই বোমা হামলা চালানো হয়। শুধু উদীচী নয়, এর পরবর্তীতে একে একে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপাসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড চালায় মৌলবাদী অপশক্তি। এ মামলার সব ধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে অবিলম্বে শিল্পী-কর্মীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

যশোরের টাউন হল ময়দানের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের টাউন হল ময়দানের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সভায় বক্তব্য দেন উদীচী যশোর সংসদের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায়, আজিজুল হক মনি, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিপাঙ্কর দাস রতন, বিবর্তন যশোরের সাধারণ সম্পাদক নওরোজ আলম খান চপল প্রমুখ। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সহসভাপতি খন্দকার রজিবুল ইসলাম টিলন।

এর আগে, সকালে টাউন হল ময়দানের হত্যাকাণ্ডের শিকার শিল্পী-কর্মীদের স্মৃতিতে নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উদীচী যশোর সংসদ, জেলা জাসদ, সিপিবি যশোর, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবর্তন যশোর, মুন্সী রইস উদ্দিন সংগীত একাডেমি, চারুপীঠ যশোর, উদীচী যশোর সরকারি এম এম কলেজ, অক্ষর শিশু শিক্ষালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সন্ধ্যায় শহীদ বেদিতে মশাল প্রজ্বালনের কর্মসূচি নিয়েছে সংগঠনটি।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে গভীর রাতে যখন হাজারো মানুষ ও সংস্কৃতিকর্মী বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক বাউলগানের সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত হয়ে ছিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে মঞ্চের নিচে আগে থেকে রেখে দেওয়া বোমার। নৃশংস হামলায় প্রাণ হারায় ১০ জন। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত