কাকডাকা ভোরে আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ এসে জড়ো হতে থাকে বোকা বিলে। কারও হাতে পলো আবার কারও হাতে বিভিন্ন ধরনের জাল, কারও হাতে মাছ ধরার অন্য কোনো বস্তু। কুয়াশাঢাকা ভোরে বিলের চারদিক থেকে হাজারো মানুষ মাছ ধরতে নেমে পড়েন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বইলর ও কাঁঠাল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বোকা বিলে আজ বৃহস্পতিবার মাছ ধরার ‘হাইত উৎসব’ হয়। বর্ষাকালে পাঁচ শতাধিক একর জায়গায় পানি থাকলেও তা শুকিয়ে এখন দুই শতাধিক একরে এসে ঠেকেছে।
বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে বর্ষা শেষে যখন পানি কমতে থাকে, তখন থেকেই শুরু হয় হাইত বা মাছ ধরার উৎসব। তবে দখল-দূষণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ কমে যাওয়ায় এ উৎসব এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ব্যতিক্রম এই বোকা বিল। এখানে এখনো প্রতিবছর মাছ ধরার এই আয়োজনটি ঘোষণা দিয়ে পালন করা হয়। এ বছর এটি আরও ব্যাপক পরিসরে অনেক বেশি লোকজনের উপস্থিতিতে আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে।
‘হাইত’ উৎসবে নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। মাছ ধরার উৎসব হবে এই খবর আগেই মাইকিং করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। বিষয়টি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোক জড়ো হয় মাছ ধরতে। মাছ ধরা দেখে আনন্দ পান অনেকে। থেমে থেমে হই হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন উৎসবে মাছধরা মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, বিলটিতে অন্তত কোটি টাকার মাছ ছিল। বোয়াল, রুই, কাতলা, পাঙাশ, শোলসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে বিল থেকে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম মাহবুবুল আলম পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বিলটি প্রায় এক হাজার একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। এটি দুটি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। তবে বিলের বেশির ভাগ জায়গাই পড়েছে আমাদের কাঁঠাল ইউনিয়নে। বোকা বিলে মাছ ধরার উৎসব আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক, যা বহু বছর ধরে চলে আসছে। প্রতি বছরের মতো আজকের এই দিনটি নির্দিষ্ট করে আমরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাই।’
ত্রিশাল পৌরসভার বাসিন্দা শরীফ নাফেআস সাবের মনির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার অতিবৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন ফিশারিজ থেকে শত শত কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় বেশি মাছের আশায় আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মাছ শিকারির আগমন ঘটে। আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোকজন এক মহামিলন মেলায় আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে।’
কলেজছাত্র সুমন বলেন, ‘এই বিলে এত মানুষকে একসঙ্গে মাছ ধরতে আগে দেখিনি। অনেক মাছ ধরা পড়েছে।’
নেত্রকোনা জেলা সদর থেকে আসা কাজল মিয়া বলেন, ‘কোথাও মাছ ধরার কথা শুনলে স্থির থাকতে পারি না। মাছ যা-ই পেয়েছি, তবে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। হাজার হাজার লোকের সঙ্গে মাছ ধরার আনন্দটাই অন্যরকম।’