জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদী পারাপারের সময় নৌকাডুবির ঘটনায় বিলেদ আলী (৪৫) ওরফে বিল্লাল মণ্ডল নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নে যমুনা নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিল্লাল মণ্ডল কুলকান্দি পাইলিং ঘাট এলাকার বাসিন্দা মৃত সঞ্জু শেখের ছেলে। নিখোঁজ দুজন হলেন একই এলাকার খট্টু শেখের ছেলে খবির শেখ (৫০) এবং মৃত খোকা মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া (৩৫)।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ইসলামপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল গিয়ে কৃষক বিল্লাল মণ্ডলের লাশ উদ্ধার করে। এর আগে কুলকান্দি পাইলিং ঘাট থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায় প্রায় ৫০ জন নারী-পুরুষ যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে কৃষিজমিতে কাজ করার জন্য রওনা হন। পাড়ের কাছাকাছি পৌঁছালে নৌকাটি ডুবে যায়। অন্যরা সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও তিনজন নিখোঁজ হন। পরে একজনের লাশ উদ্ধার হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন অনুমোদিত মুরাদাবাদ নৌঘাটের অধীনে নিয়মবহির্ভূতভাবে কুলকান্দি পাইলিং ঘাট থেকে নৌকা পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে নৌকাটি ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে মুরাদাবাদ নৌঘাটের ইজারাদার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর, হেলাল, মিজান, ফকির আলী ও নাজমা বলেন, ‘কুলকান্দি পাইলিং ঘাট থেকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় নৌকাটি ডুবেছে। আমরা দাবি করছি, বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।’
প্রত্যক্ষদর্শী কুলকান্দি আঢিয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ইদু ব্যাপারী বলেন, ‘পূর্বপাড় থেকে যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে কৃষিজমিতে কাজ করতে আমি ও অন্তত ৫০ জন নারী-পুরুষ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উঠেছিলাম। নদীর পশ্চিম পাড়ের কাছে পৌঁছালে নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকাটির মালিক আব্দুর রশীদ। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় নৌকাটি ডুবেছে।’
বাহাদুরাবাদ নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় নিহত বিল্লাল মণ্ডলের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
মুরাদাবাদ নৌঘাটের ইজারাদার মো. রাসেদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের ঘাট থেকে পারাপারের জন্য চারটি নৌকা ব্যবহৃত হয়। যমুনা নদীতে যে নৌকাটি ডুবে গেছে, সেটি আমাদের ঘাটের নৌকা নয়। এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন নৌকা, যা কুলকান্দি পাইলিং ঘাটে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলছিল। আমরা কোনো ভুল করিনি।’
কুলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনুছুর রহমান আনিছ বলেন, ‘ডুবে যাওয়া নৌকাটি মুরাদাবাদ নৌঘাটের কি না, তা আমি জানি না। তবে লাশ উদ্ধার করার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম।’
ইসলামপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন লিডার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিল্লাল মণ্ডল নামে এক কৃষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, নৌকাডুবির ঘটনায় আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। আমাদের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
ডুবে যাওয়া নৌকার মালিক কুলকান্দি ইউনিয়নের কাউনেরচর গ্রামের পাগারো মিয়ার ছেলে আব্দুর রশীদ ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকায় তাঁর কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার অনুমোদিত ঘাটের নৌকা বা খেয়াঘাটের মালিক পরিবর্তনের সুযোগ নেই। মুরাদাবাদ কুলঘাটের অধীনে যদি কুলকান্দি পাইলিং ঘাটে নৌকা পরিচালনা করা হয়ে থাকে, সেটা তদন্ত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’