১০ দিন আগে বিয়ে করেছিলেন নূর মোহাম্মদ। আজ সোমবার ছিল বউভাত। নিমন্ত্রণ কার্ড দিয়ে দাওয়াতও দিয়েছিলেন আত্মীয়স্বজনদের। কিন্তু সেই দাওয়াতে আর অংশগ্রহণ করতে হয়নি কাউকে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার পৌর শহরের গোহাটা মোড়ে সাইনবোর্ড লাগাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা আরও একজন মারা যান।
নূর মোহাম্মদ পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। কাজের সুবাদের পরিচিত হওয়ায় এক ইঞ্জিনিয়ারকে বউভাতের কার্ড দিতে গিয়েছিলেন সেখানে। তখন তাঁকে সাইনবোর্ডটি তিনতলার ছাদে লাগাতে সহযোগিতা করার অনুরোধ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হন। অসাবধানতাবশত বিদ্যুতের তারে স্পর্শ লেগে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিচে পড়ে মারাত্মক আহত হন তিনি। অবস্থার অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি বৈলর বাঁশকুড়ি এলাকার আবুল কালামের ছেলে। পরিবারের দায়িত্ব ছিল যার কাঁধে। তাঁকে হারিয়ে স্বজনেরা এখন যেন দিশেহারা।
গত ২৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) তাঁরই খালাতো বোন রোজিনা আক্তারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। রোজিনা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলবাড়িয়ার দবরদস্তা গ্রামের উসমান মল্লিকের মেয়ে।
তাঁদের চার ভাই ও দুই বোনের সবার বড় ভাই অসুস্থ। আরেক ভাই মসজিদের ইমাম। পুরো সংসারের সবাই তাঁর আয়ের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। নূর মোহাম্মদের এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছে না পরিবারটি।
বাশার টাইলস অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে কর্মরত দুজন আজকের পত্রিকাকে জানান, নূর মোহাম্মদ অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র ও কর্মঠ লোক ছিলেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে তাঁদের পুরো পরিবারের হাল ধরেছিলেন। তাঁর বৃদ্ধ কৃষক বাবা, কাজ করতে অক্ষম এক ভাই ও তাঁর স্ত্রী-সন্তান এবং বাকি আরও তিন ছোট ভাইবোনের দায়-দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সুন্দরভাবে চলছিলেন। এখন ওই পরিবারটি অকূলপাথারে পড়ে গেল। ঘটনার দিন তিনি কাজ শেষ করে আমাদের দোকানে বউভাতের দাওয়াত কার্ড দিয়ে আবার ওখানে কার্ড দিতে বের হয়েছিলেন।