সব ধরনের তালারই নকল চাবি তৈরি করেন মো. নয়ন মিয়া (৩৭)। ১০ বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গে থেকে থেকে এই কাজ শিখেছেন তিনি। তাঁর বানানো চাবিতে অনায়াসে তালা খুললেও এই আয়ে পেট আর ভরছে না। একদিকে তাঁর আয়-রোজগার কমে গেছে, অন্যদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নয়ন মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার কাকনহাটি গ্রামে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ তাঁর বাবা মো. নবী হোসেন (৭০) চাবি বানানোর কাজ ছেড়েছেন অনেক আগে। তবে তাঁর পক্ষে বাবার পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই পেশা ছেড়ে দিয়ে তিনি কী কাজই বা করবেন!
ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশেই তালা-চাবি মেরামতের টং দোকান নয়নের। সেখানে আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাঁর।
নয়ন বলেন, নকল চাবি তৈরির পাশাপাশি অকেজো তালা, টর্চলাইট, পুরোনো ছাতা মেরামতসহ লাইটারে গ্যাস ভরার কাজ করেন তিনি। একটা সময় প্রচুর কাজ মিলত। আয়-রোজগারও ভালো হতো। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের তালা-চাবি বাজারে এসেছে। ফলে পুরোনো তালা-চাবি মেরামত করতে লোকজন তেমন আর আসে না। তাঁদের বিবেচনায় মেরামত করার চেয়ে নতুন তালা কেনাই ভালো। অন্যদিকে টর্চ লাইটের স্থান দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোন।
নয়ন মিয়া আরও বলেন, ‘বর্ষাকালে ছাতা মেরামতের টুকটাক কাজ হয়। তবে লাইটারে গ্যাস ভরতে মানুষ তেমন আসে না। পাঁচ টাকা দিয়ে পুরোনো লাইটারে গ্যাস ভরার চেয়ে ১০ টাকা দিয়ে নতুন লাইটার কিনেই তারা খুশি। একটা সময় কোনো জিনিস নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ তা মেরামত করে ব্যবহার করত। তখন আমাদের কদর ছিল। বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের দাম, আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুই বেলা দুই মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
নয়নের দোকানে কথা হয় মো. রমিজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। রমিজ বলেন, বিপদে পড়ে চাবির কারিগর নয়নের কাছে এসেছেন তিনি। স্ত্রী পুকুরে গোসল করার সময় শাড়ির আঁচল থেকে শোকেস, আলমারিসহ বেশ কিছু তালার চাবি হারিয়ে যায়। ওইগুলোর নকল চাবি বানাতেই নয়নের কাছে এসেছেন।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘একসময় বিভিন্ন বাজারে, রাস্তার মোড়ে, ফুটপাতে তালা-চাবির কারিগরদের দেখা মিলত। কিন্তু বর্তমানে তাদের খুব বেশি চোখে পড়ে না। হাতে কাজ না থাকায় হয়তো অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।’