সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও ময়মনসিংহে চামড়ার প্রকৃত দাম না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে অনেকে। কেউ কেউ চামড়া ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি মাদ্রাসায়ও দান করে দিচ্ছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চামড়াশিল্পে দুরবস্থা কাটছে না।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জেলায় কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭০ হাজার। সিটি করপোরেশনে কোরবানি পশু জবাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। গতকাল রোববার দুপুর থেকে ময়মনসিংহ নগরীর চামড়া গুদাম এলাকায় দেখা যায় ফড়িয়ারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রিকশা, ভ্যান এবং পিকআপে করে চামড়া নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। ঈদের দ্বিতীয় দিন সকালেও চামড়া নিয়ে এসে কিছু ফড়িয়াকে দেখা গেছে বিক্রি করতে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহেদুল আলম জানান, জেলায় কোরবানি পশু জবাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। যা গত বছরের তুলনায় ৪০ হাজার বেশি। এসব কোরবানি পশুর চামড়া সুন্দরভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ন্যায্য দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক অংশীজনদের নিয়ে সভা করেছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, ‘রপ্তানিযোগ্য এই সম্পদ কোনোভাবে যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেন চামড়ার ন্যায্য দাম পায়, সে বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
মৌসুমি ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আড়তদারেরা সেই দাম দিচ্ছেন না। তাই কম মূল্যে আমাদের চামড়া ক্রয় করতে হচ্ছে।’
মৌসুমি ব্যবসায়ী আলাল হোসেন, ‘সারা দিন ঘুরে ২০টা চামড়া কিনেছি। এতে ২২০০ টাকার মতো লাভ হয়েছে। তবে বাজার ভালো থাকলে লাভ আরও দ্বিগুণ হতো।’
চামড়া ব্যবসায়ী শেখ মাসুম বলেন, ‘প্রতিবছর সরকার-নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রির কথা থাকলেও ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়। ফলে আমরা লোকসানের মুখে পড়ি। তাই আমরা বেশি দামে চামড়া কিনতে পারি না।’
ব্যবসায়ী মো. খসরু বলেন, ‘গতকাল প্রতি বস্তা লবণ ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা। আজ তা কিনতে হচ্ছে ১৩০০ টাকা বস্তায়। এ বছর প্রায় দুই হাজার চামড়া কিনেছি। একটা চামড়াপ্রতি ১০ থেকে ১২ কেজি লবণ লাগে। চামড়ায় লবণ দেওয়ার পূর্বে প্রস্তুত করতে আরও ২০ টাকা খরচ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়ার চাহিদা কম। তাই সব মিলিয়ে ব্যবসাটা কোনোভাবেই ভালো হচ্ছে না।’