ঘুটঘুটে অন্ধকার উপেক্ষা করেই বিলের পাড়ে জড়ো হন স্থানীয়দের পাশাপাশি আশপাশের উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে হই হুল্লোড় করতে করতে জাল-পলো নিয়ে মাছ ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শৌখিন মাছশিকারিরা। আজ রোববার ভোর থেকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের বলদা বিলে দেখা মিলে মাছ ধরার এমন উৎসবের। এই উৎসবকে ‘হাইত’ বা গ্রামের ভাষায় ‘হাওক’ বলা হয়।
স্থানীয়রা জানান, ঈশ্বরগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বলদা বিলের অবস্থান। বিলের বেশির ভাগ অংশ ঈশ্বরগঞ্জের মাইজবাগ ইউনিয়নের দত্তগ্রামে, কিছুটা জাটিয়া ইউনিয়নের কুমারুলে এবং এর কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নে পড়েছে।
অনেকে আবার কাঁথা-বালিশও নিয়ে আসেন বিলের পাড়ে ঘুমাবেন বলে। এরপর ভোরের আলো ফোটার আগেই হই হুল্লোড় করতে করতে বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শৌখিন ওই সব মাছশিকারিরা। ভোর থেকে শুরু হয়ে এই উৎসব চলে দুপুর অব্ধি।
এদিকে উৎসবের এই আমেজে মেতে ওঠে স্থানীয় শিশু-কিশোরসহ বয়োজ্যেষ্ঠরাও। মাছশিকারিদের জালে বোয়াল, রুই, কাতলা, টাকি মাছ বেশি উঠতে দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তুফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই বিলে মাছ ধরে স্থানীয় ২৫০ থেকে ৩০০ পরিবার সারা বছরেই জীবিকা নির্বাহ করে। এরপর পানি কমে গেলে প্রতি বছরেই হাইত উৎসব হয়। মাছ ধরতে এবং দেখতে দূর দূরান্তেরা মানুষজন এখানে ছুটে আসেন।
তিনি আরও বলেন, এই উৎসবে শামিল হতে বিল পাড়ের বাসিন্দাদের বাড়িতে একদিন আগেই এসে পড়েন আত্মীয়স্বজন। হাইতের এই দিনটিতে ঈদের মতোই আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন সবাই। এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিটা বাড়িতেই রান্না হয় পোলাও, মাংস।
হাইত উৎসবে মাছ ধরতে এসেছেন পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের টেঙ্গাপাড়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব মো. আবুল কাশেম। কাশেম জানান, হাইত উৎসব হবে খবর পেয়ে গতকাল রাতে তিনি এখানে এসেছেন। বিলের পাড়ে পাটি বিছিয়ে, কাঁথা মুড়ি দিয়ে অপেক্ষা করেছেন ভোরের আলো ফোটার। ফজরের পরপরই সবার সঙ্গে নেমে পড়েন মাছ ধরতে। প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালোই মাছ পেয়েছেন তিনি। যে কারণে সারা রাতের কষ্টটা ভুলে গেছেন।
উপজেলার জ্যৈষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম সানোয়ার রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাইত একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ উৎসব। বিভিন্ন খাল-বিল উন্মুক্ত জলাশয়ে হেমন্তকালের কোনো একদিন নানা বয়সী লোকজন একত্রে হয়ে মাছ ধরাকেই হাইত বলা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে হাইত উৎসবকে কেন্দ্রকরে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা এবং কোনো মালিকানাধীন জলাশয়ে জোরপূর্বক মাছ ধরার সুযোগ নেই।