নির্মাণাধীন নেত্রকোণা-ঈশ্বরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে অবৈধ ভারতীয় পণ্য ও মাদক চোরাচালানের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর এ কাজে গৌরীপুর থানা-পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী মহল রীতিমতো প্রটোকল দিয়ে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ রোববার (৩ মার্চ) সকালে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাকিল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপজেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন জুয়েল। এ সময় ব্যাপক তোপের মুখে পড়েন গৌরীপুর থানার ওসি।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ম. নুরুল ইসলাম, মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল ফারুক, অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়েদুল ইসলাম, রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি প্রমুখ।
জানা গেছে, নির্মাণাধীন মহাসড়কটি আজও উদ্বোধন হয়নি। তবে সেই অপেক্ষায় বসে নেই চোরাকারবারীরা, বরং নিরাপদ পথ হিসেবে এ সড়কটি হয়ে উঠেছে তাদের প্রধান ট্রানজিট। ভারত থেকে চোরাই পথে সীমান্ত ফাঁকি দিয়ে আসা অবৈধ চিনি, বিভিন্ন ধরনের মসলা ও মাদকদ্রব্য নেত্রকোণা জেলা শহর থেকে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা, শাহগঞ্জ বাজার, অচিন্তপুর ও বোকাইনগর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানযোগে পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ২০-২৫টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দিয়ে এসব চোরাই পণ্য পরিবহন করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, শাহগঞ্জ বাজারে ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যবসায়ী রানা, সুজন, লংকাখলা গ্রামের সুমন, শাহগঞ্জ বাজারের মনোহারি ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনের দোকানে ভোরবেলা এসব ট্রাক থেকে প্রায়ই পণ্য নামান। কোনো সমস্যা হলে তাঁরাই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। মোটা অংকের চুক্তিতে পণ্যসহ ট্রাকগুলোকে গৌরীপুরের সীমানা পার করে দেয় প্রভাবশালী আরেকটি মহল।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহগঞ্জ বাজারের মনোহারী ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন পরে দেখা করে নিজের বক্তব্য জানাবেন বলে জানান। এ ছাড়া অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁদের পাওয়া যায়নি।
গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন জুয়েল বলেন, ‘এটা খুবই লজ্জাজনক বিষয় যে, গৌরীপুরের ওপর দিয়ে পুলিশের প্রহরায় ভারতীয় চোরাই পণ্য ও মাদক পাচার হচ্ছে।’
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাকিল আহমেদ আজকের পত্রিকা বলেন, চোরাচালান ও মাদকের ব্যাপারে প্রশাসন জিরো ট্রলারেন্সে আছে। আইন-শৃঙ্খলা সভায় যে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে, তা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পাচার বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’