ময়মনসিংহের ত্রিশালে বৈলর-ফুলবাড়িয়া ভায়া ধানীখোলা সড়ক সংস্কারের দাবিতে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ প্রশাসন এসে দীর্ঘ চেষ্টার পর তাদের আশ্বস্ত করলে তারা রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। এর আগে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনেও অংশ নেয় অবরোধকারীরা।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বইলর মোড়ে শুরু হওয়া এ অবরোধে কয়েক হাজার লোক অংশগ্রহণ করে। এ সময় দুর্ভোগে পড়ে মহাসড়কে চলাচলকারী হাজারো লোক। দুই পাশে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ চলাকালে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে কিছু মানুষ মহাসড়কের ওপরেই শুয়ে পড়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ত্রিশাল অংশের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের কাজ কয়েকবার শুরু হয়েও আবার থেমে যায় বলে মানববন্ধনে আসা বক্তারা জানান। এই দীর্ঘ সময়েও সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের ওপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।
এ সড়ক ময়মনসিংহের ত্রিশাল-ফুলবাড়িয়া উপজেলার সংযোগ সড়ক। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে সড়কের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ। অথচ সড়ক জুড়ে এখনো অসংখ্য খানাখন্দ। দেখে মনে হয় সড়কটি যেন কাঁদার মাঠ। এদিকে এই পাঁচ বছরে তিন দফা পিছিয়েছে সড়কটির সংস্কারকাজ। প্রায় এক বছর ধরে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে বেকায়দায় পড়েছে স্থানীয় জনগণ।
জানা গেছে, ত্রিশাল উপজেলার বৈলর মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। ওই ২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। ত্রিশালের বৈলর মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার সীমানা পর্যন্ত সড়কটির সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পড়েছে ত্রিশাল অংশে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ও শত শত যানবাহন চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে।
তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। ২০১৬ সালে টেন্ডার হয়ে বাতিল হলে ২০১৮ সালে আবার সড়কটি পুনর্নির্মাণ টেন্ডার হয়। ১২ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের পুনর্নির্মাণের কাজটি পান মেসার্স ঢালি কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী নাসিমুল গনি। ওই বছরের ২৬ জুন থেকে ২০১৯ সালের ১৩ আগস্টের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের অপারগতায় পরপর তিন দফায় বর্ধিত করা হয় সময়। বর্ধিত সময় শেষ হলেও রাস্তা সংস্কারে হয়নি কোনো অগ্রগতি।
সড়কের অসংখ্য গর্তে হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারী দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। বিদ্যমান অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেন স্থানীয়রা।
সড়কের কত শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং কত টাকা ঠিকাদার উত্তোলন করেছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে ঠিকাদার ৩০ শতাংশের মতো টাকা উত্তোলন করেছে।’
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘সড়ক সংস্কারের দাবিতে দুই উপজেলার কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ মহাসড়ক অবরোধ করে। কাজটি পুলিশের না হলেও দ্রুত রাস্তা সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব বলে সাধারণ জনগণকে আশ্বস্ত করলে জনগণ মহাসড়ক থেকে সরে যায়। এখন যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’