Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > ময়মনসিংহ

ত্রিশালে অভাবে দুই শিক্ষার্থীর কাঁধে জোয়াল, বন্ধ পড়াশোনা

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ত্রিশালে অভাবে দুই শিক্ষার্থীর কাঁধে জোয়াল, বন্ধ পড়াশোনা

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অভাবের তাড়নায় দুই শিক্ষার্থীর কাঁধে উঠেছে হালের জোয়াল। দরিদ্র কৃষক ইব্রাহিম গরুর বিকল্প হিসেবে নিজের ছেলে রব্বানী ও তাঁর চাচাতো ভাই হাসিম আমলাকে দিয়েই হালের লাঙল টানাচ্ছেন। লাঙল টানা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানী মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য দিতে পারেনি একাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা, বন্ধ রয়েছে তাঁর পড়াশোনা। অপরদিকে অর্থাভাবে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিম আমলার পড়াশোনাও বন্ধের পথে। 

এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোলাম রব্বানী। সে কান্না জড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য আমি ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমার বাবাকে বলেছিলাম পাঁচ হাজার টাকা পরীক্ষার ফি হয়েছে। বাবা বলছে ২০০ টাকা পকেটে আছে। তাই আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমার ইচ্ছে ছিল আমি পড়ব, কিন্তু পড়তে পারছি না। এটা আমার মনে অনেক কষ্ট, আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম না টাকার কারণে।’ 

‘আমরা মধ্যবিত্ত বলে কারও কাছে চাইতেও পারি না’—বলেই কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় সে। পরে চোখের পানি মুছে আবারও বলতে শুরু করে, ‘আমার এক ভাইয়ের অল্প আয়ে আমাদের পুরো সংসার চলে। আমি ছোট বলে কিছু করতে পারছি না, পড়ালেখাও চালাইতে পারছি না। মধ্যবিত্ত বলে পারছি না। সরকারের কাছে অনুরোধ, লেখাপড়ার পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো কাজের সুযোগ দেওয়া হোক আমাকে।’ 

গোলাম রব্বানীর বাবা আবদুল কাদের কেঁদে কেঁদে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি অক্ষম এক বাবা। পয়সার অভাবে ছেলের পড়াশোনার খরচ দিতে পারি না, যখন ছেলে টাকা চায় তখন আমার কাছে টেহা থাহে না, খুব কষ্ট অয়। এক ছেলের কামাই দিয়া আমার পুরা সংসার চলতাছে। মাত্র দশ শতাংশ জমি আমার। এইহানি আবাদ কইরা কোনবা আল্লাহ আমার দিন নিতাছে।’ 

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিম আমলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হালচাষের কোনো গরু নেই। টাকা খরচ করে ট্রাক্টর আনার সামর্থ্যও এখন আমার বাবার নেই। তাই বাধ্য হয়েই লাঙল টানছি।’ 

লাঙল টানা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানীদরিদ্র কৃষক ইব্রাহিম ফকির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অল্প জমি চাষাবাদ করে পাঁচ সদস্যের সংসার এখন আর চলছে না। তাই দিনমজুরি, মাছ ধরে যখন যা পাই তাই করে বহু কষ্টে সংসার চালাচ্ছিলাম। বহু কষ্ট করে একটি ষাঁড় গরুও কিনে পালতেছিলাম। কিছুদিন আগে সেটিও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এখন নিরুপায় হয়ে ছেলে ও এক চাচাতো ভাইকে দিয়ে হালচাষ করিয়েছি। টাকার অভাবে ছেলে হাসিম আমলার পড়াশোনাও বন্ধের পথে। শুনেছি দরিদ্র কৃষকদের বিভিন্ন সহযোগিতা করে সরকার। এরকম কোনো সহযোগিতা পেলে ছেলের পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারতাম।’ 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য বুলবুল আহমেদ (বুলু মিয়া) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইব্রাহিমের হতদরিদ্র পরিবার ও ওই শিক্ষার্থী কোনো সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসলে অনেক উপকৃত হবে। আমার জানা মতে সে খুবই মেধাবী ছাত্র।’ 

এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় গরু-লাঙলের চাষ অনেকটা কমে গেছে। যে কারণে অনেক কৃষক বিকল্প পথে চাষাবাদ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী যদি এই পরিবারটিকে কোনো সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা যায়, তবে তা করা হবে।’ 

ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই কৃষকের যেহেতু কিছু জমি আছে, তাই আমাদের কৃষি প্রণোদনার আওতায় সার, বীজ দেওয়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ সরকারের যে যে জায়গা থেকে তাঁকে সহযোগিতা করার সুযোগ আছে খোঁজ নিয়ে তা করা হবে। আর পড়াশোনার বিষয়ে আমরা সব সময় উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করে থাকি। আশা করি তাঁকেও সহযোগিতা করতে পারব।’

ময়মনসিংহে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগ, আটক ১

মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করায় নেত্রকোনায় যুবক আটক

বকশীগঞ্জে ৪ ইটভাটায় ২ লাখ টাকা জরিমানা

ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বার স্মরণে ‘চিরভাস্বর’ চতুর্থ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন

কেন্দুয়ায় ‘মাজারে’ হামলা, ওরস পণ্ড

নেত্রকোনায় মাছ লুটের মামলায় ছাত্রদলের নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

স্কুলের বারান্দায় মাদকের আড্ডা, বাধা দেওয়ায় ৪ তরুণকে কুপিয়ে জখম

শেরপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ঠেকাতে বিক্ষোভ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি ভাঙচুর

চাঁদাবাজির মামলায় নেত্রকোনায় কৃষক দল নেতা গ্রেপ্তার

ম্যাঙ্গো জুস কারখানায় পাওয়া গেল না কোনো আম