গরুর অন্যতম খাবার হচ্ছে খড়। বছরের এই সময়টাতে খড়ের সংকট থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকসহ খামারিদের খড়ের জোগান দিতে খানিকটা হিমশিম খেতে হয়। চাহিদার তুলনায় খড়ের জোগান কম থাকায় তুলনামূলকভাবে দামও রয়েছে দ্বিগুণ, যে কারণে শাকসবজির মতো আঁটি সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে খড়। প্রতি আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা দরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গোখাদ্যের চাহিদা মেটাতে শাকসবজির মতো আঁটি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে খড়। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের কাঁচামাটিয়া নদীর পুরাতন ব্রিজের ওপর গেলেই দেখা মেলে খড় বেচাকেনার এমন দৃশ্য, যেখানে উপজেলার দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকসহ ছোট খামারিদের সংখ্যাই বেশি। খড় কিনতে আসা ক্রেতারা কেউ নিচ্ছেন ১০ কিংবা ২০ আঁটি, আবার কেউ ভ্যানগাড়ি নিয়ে পুরো সপ্তাহের খড় সংগ্রহ করছেন। প্রতি খড়ের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। চাহিদার তুলনায় জোগানে সংকট হওয়ায় খড়ের দাম দ্বিগুণ বলে দাবি ক্রেতাদের।
স্থানীয় খড় বিক্রেতা মো. আব্দুস ছাত্তার বলেন, `পার্শ্ববর্তী উপজেলা কেন্দুয়া থেকে খড়গুলো সংগ্রহ করছি। চাহিদার তুলনায় খড়ের সংকট থাকায় অনেক বেশি দাম দিয়ে তা সংগ্রহ করতে হয়, যে কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে দাম একটু বেশি নিতে হচ্ছে। প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকায় খড় বিক্রি করছি।'
খড় কিনতে আসা মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, `একটা দুধের গাভিসহ ছোটবড় মিলিয়ে আমার চারটি গরু আছে। গাভিটি প্রতিদিন ৩ লিটারের মতো দুধ দেয়। খড়ের দাম বেশি হওয়ায় দুধ বিক্রি করে যে টাকা আসে, তা খড় কিনতেই চলে যায়। প্রতিদিন ১০ আঁটি করে খড় লাগে।'
ষাটোর্ধ্ব মো. ইদ্রিছ আলী ফকির বলেন, `হাগের (শাক) আডির মতো ২০-২৫ টেহায় বেচতাছে বন (খড়)। যে টেহার বন পত্তিদিন কিইন্ন্যা গরুরে খাওয়াইতাছি। এর চেয়ে বেশিডি তো হাইন্যাবালা গোয়াইলো (গোয়ালঘর) ধোঁয়া দিই। আর কয়ডা দিন পরে ধাওয়ামাড়ি (ধানকাটা) লাগলে বনের আর অভাব থাকত না।'
এ বিষয়ে প্রান্তিক খামারি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে গোখাদ্যের সংকট প্রতিবছরই কমবেশি হয়ে থাকে। তবে এ বছর দীর্ঘমেয়াদি বর্ষার কারণে বেশির ভাগ কৃষকের খড় নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী খড়ের দাম দ্বিগুণ।
পৌর এলাকার খামারি সামী উসমান গনি বলেন, `একদিকে প্রতিনিয়ত গোখাদ্যের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে খড়ের দাম দ্বিগুণ হলেও তা সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের মতো খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।'
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, আমন ধান কাটা শুরু হলেই খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে।
প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকসহ খামারিদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, গোখাদ্যের বিকল্প হিসেবে ঘাসের চাষ করতে হবে। উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে উন্নত ঘাসের চাষ হচ্ছে। আর সিজনের সময় খড় সংগ্রহ করতে হবে। ওই সময় খড়ের দাম কম থাকে।