'মজাদার জামাই পিঠা, খাইলে লাগে মিঠা, দাম মাত্র পাঁচ টাকা, যারা খাইবেন মাইকের কাছে চলে আসেন। নষ্ট মোবাইল ভাঙা, ঘড়ি ভাঙা ও মাথার চুল দিয়েও নিতে পারেন সুস্বাদু জামাই পিঠা'। মাথায় পিঠার ঝুড়ি ও ঝুড়ির ওপর বাচ্চাদের আচার নিয়ে এভাবেই মাইক দিয়ে ডাকেন রহমত উল্লাহ।
রহমত উল্লাহর এমন ডাকে ব্যাপক সারা দিয়ে চারদিক থেকে দল বেঁধে ছুটে আসে ছোট বাচ্চাকাচ্চাসহ নানা বয়সী মানুষ। ছোট বাচ্চাদের কারোর হাতে দুই টাকা অথবা পাঁচ টাকা, আবার কেউ এনেছেন অল্প কিছু চুল। যে যা নিতে আবদার করছে, সাধ্যমতো তাই দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
রহমত উল্লাহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বয়স প্রায় ৫০। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আইল গ্রামে। স্ত্রী, দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছেলে দুটো বিয়ে করে অনেক দিন আগেই পৃথক হয়ে গেছে। মেয়েটা স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। বাড়িতে সম্পদ বলতে বাড়ি টুকোই আছে। পিঠা বিক্রিতে যেই টাকা লাভ হয়, সেটা দিয়ে নিজের সংসার ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালান। অবশিষ্ট যে টাকা থাকে, সেটা মেয়ের বিয়ের জন্য জমিয়ে রাখছেন রহমত।
গত এক বছর যাবৎ ঈশ্বরগঞ্জে রেলস্টেশনের কাছে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ওখানেই থাকেন তিনি। সারা দিন পৌর সদরসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে পিঠা বিক্রি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই শুরু করেন পিঠা তৈরির কাজ। সন্ধ্যা থেকে মাঝ রাত অব্ধি পরদিনের পিঠা তৈরিতেই ব্যস্ত সময় পাড় করেন রহমত। নিজের কর্মযজ্ঞের কথা এভাবেই ব্যাখ্যা করেন সে।
আচ্ছা এই পিঠার তো আরও অনেক নাম হতে পারত, তাহলে জামাই পিঠা রাখার বিশেষত্ব কি? জবাবে রহমত বলেন, 'আমাদের এলাকায় এই পিঠা ছাড়া জামাইদের আপ্যায়নই হয় না। নতুন জামাই হলে তো কথাই নেই। সেই সুবাদে এই পিঠার নাম রাখা হয়েছে জামাই পিঠা।'
রহমত উল্লাহ আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিকে বলেন, 'জীবন-জীবিকার তাগিদে ও মেয়েটাকে ভালো একটা ঘরে বিয়ে দিতে, স্ত্রী, সন্তানদের ভালোবাসা উপেক্ষা করে এত দূরে পড়ে আছি।'
জামাই পিঠা কিনতে আসা সখিনা নামের এক গৃহবধূ বলেন, 'মাইকে জামাই পিডা বেডার রাও হুন্ন্যাই আবুদুবাইনে মাথা খাইয়ালতাছে কিইন্ন্যা দিতাম। তাই পোলাপানরে পিডা কিইন্ন্যা দিতাম আইছি।'
মেহেদী হাসান সাব্বির নামের নামের এক স্থানীয় অধিবাসী বলেন, 'উনাকে প্রায় সময়েই এইদিক দিয়ে পিঠা নিয়ে আসতে দেখা যায়। দাম কম থাকলেও উনার পিঠাগুলো খুবই সুস্বাদু এবং মজাদার।'