‘এক টাকায় শিঙাড়া-পেঁয়াজু’ শুনেই অনেকে বিস্মিত হন। এ কথা শুনে কৌতূহলের বশে হলেও আসেন অনেকে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া বাজারে গেলেই মিলবে এমন দৃশ্য। এক টাকার শিঙাড়া-পেঁয়াজু বিক্রি করেন প্রদীপ (৬০)। তাঁর বাড়ি একই ইউনিয়নের বড়জোড়া গ্রামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কঠোর লকডাউনে এলাকা ফাঁকা থাকলেও জীবিকার তাগিদে শিঙাড়া–পেঁয়াজু নিয়ে বসে আছেন প্রদীপ। ছোট একটি কাঠের চৌকির ওপর বসে ক্রেতার অপেক্ষা করছিলেন তিনি। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও জীবিকার তাগিদে দোকান বসাতে হয়েছে তাঁকে। তবে আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ তাঁর চোখে-মুখে।
প্রদীপ জানান, স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। নিজের সহায়-সম্পদ বলতে ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। দীর্ঘ পনেরো-ষোলো বছর ধরে হারুয়া বাজারে এক টাকার শিঙাড়া-পেঁয়াজু বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চলে তাঁর। লকডাউনে তাও বিক্রি না হওয়ায় কষ্টে দিন চলছে তাঁর।
এ সময় এক টাকায় বিক্রির কারণ জানতে চাইলে প্রদীপ বলেন, ‘আমার এই ব্যবসা প্রায় পনেরো-ষোলো বছরের। এই দীর্ঘ সময় এক টাকায় শিঙাড়া-পেঁয়াজু বেচতে বেচতে এক টাকার শিঙাড়াওয়ালা হিসেবে আমার একটা পরিচিতি হয়ে গেছে। এক টাকার কথা শুনে কৌতূহলের বশে দূর থেকেও অনেকে ছুটে আসে। শেষ বয়সে এগুলোর দাম বাড়ালে পরিচিতি এবং সুনাম দুটোই নষ্ট হবে। তাই দাম বাড়াইনি।’
ক্রেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বর্তমানে ৫ টাকার নিচে ফকির-মিসকিনও ভিক্ষা নেয় না। সেখানে উনি এক টাকার দামের শিঙাড়া পেঁয়াজু বিক্রি করছেন। দাম কম থাকলেও ওনার খাবার অনেক সুস্বাদু। তবে লকডাউন থাকায় বিক্রি কমেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী রতন বলেন, ‘বিশ-পঁচিশ বছর আগেও দেখেছি প্রদীপ নিজের তৈরি মুড়ি ভাজা গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। এক যুগের বেশি সময় ধরে সে এক টাকার শিঙাড়া-পেঁয়াজু বিক্রি করছে। দাম কম থাকলেও এগুলোর মান খুবই ভালো।’
আব্দুর রহমান নামের এক বৃদ্ধ জানান, ‘এক টাকায় শিঙাড়া বেচে প্রদীপ এখন এক টাকার শিঙাড়াওয়ালা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বাজারের জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও এত অল্প টাকায় শিঙাড়া বিক্রি করে ঈশ্বরগঞ্জের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে প্রদীপ।’