৩৪ বছর আগে পরিবারের ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সুফিয়া বিবি (৬০)। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান পাননি। এরপরও আশা ছেড়ে দেন স্বজনেরা। তাঁদের ধারণা ছিল, সুফিয়া বিবি আর বেঁচে নেই। হঠাৎ গত সোমবার ফেসবুকে সুফিয়া বিবিকে দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন তাঁরা। তিনি আছেন পাকিস্তানের করাচির ছোট গ্রামে। এখন তাঁকে কাছে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে আছেন।
গত সোমবার ‘দেশে ফেরা’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে হারিয়ে যাওয়া সুফিয়ার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। পরে এটি ভাইরাল হলে সুফিয়ার স্বজনেরা তাঁকে শনাক্ত করেন। তবে সুফিয়া বিবি নিখোঁজের পর হারিয়েছেন দুই মেয়েসহ মা-বাবাকে। তাঁর বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর কাশিগঞ্জ নাওপাড়া গ্রামে।
তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুফিয়া বিবিরা ছয় ভাই ও পাঁচ বোন। ভাই-বোনের মধ্যে সুফিয়া চতুর্থ। ১৯৭৮ সালের দিকে তাঁর বিয়ে হয় নিজ উপজেলার পাশের দামোদরপুর ইউনিয়নের সৌলাপাড়া গ্রামের আব্দুর জব্বারের সঙ্গে। এরপর তাঁদের ঘরে জোবেদা ও ছোবেদা নামে দুই মেয়েসন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের সাত বছর পর মারা যান স্বামী আব্দুর জব্বার। স্বামী মারা যাওয়ার কিছুদিন পর সুফিয়া দুই সন্তান নিয়ে ফেরেন বাবার বাড়িতে।
সুফিয়া ’৯০ সালের দিকে যখন বাবার বাড়ি থেকে অভিমানে বেড়িয়ে যান, তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫-২৬ বছর। ওই সময় দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ছয়, অন্যজনের আট বছর। সুফিয়া নিখোঁজের দুই বছর পর বড় মেয়ে ছোবেদা ও ১৬ বছর পর ছোট জোবেদা মারা যান। সুফিয়ার বাবা চাঁন মামুদ ও মা শরিতন নেছাও বেঁচে নেই। তাঁরা মারা গেছেন ২০ বছর আগে। তবে তাঁর সব ভাই-বোন এখনো বেঁচে আছেন।
সুফিয়ার ভাই সহিদার রহমান বলেন, ‘গত সোমবার বোনের একটি ভিডিও মোবাইল ফোনে দেখতে পাই। সেখানে বোন কথা বলছেন। আমার মা-বাবাসহ সব ভাই-বোনের নাম ভিডিওতে বলেন। আমরা বোনকে দেখেই চিনতে পারি। তিনি আছেন পাকিস্তানের করাচির ছোট গ্রামে। গতকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) একটি গ্রুপ সদস্যদের মাধ্যমে মোবাইলে (ভিডিও কনফারেন্স) বোনের সঙ্গে সরাসরি কথাও বলেছি। বোন আমাদের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি দেশে ফেরার জন্য আকুতি-মিনতি করেন। তবে কীভাবে বোন পাকিস্তান গেছেন তা জানা সম্ভব হয়নি।’
তাঁর আরেক ভাই মতিয়ার রহমান বলেন, ‘৩৪ বছর আগে পরিবারের ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বোনটি। তাকে অনেক জায়গায় খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। আমরা ভাবছিলাম তিনি বেঁচে নেই। মা-বাবা সব সময় বোনটির কথা বলছিলেন। তাঁরা আজ বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।’
মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আলম ভুট্টু বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। আমরাও চাই সুফিয়া নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফিরে আসুক। এখন সুফিয়ার স্বজনেরা যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে তা করা হবে।’
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেন বলেন, ‘ওই বিষয়টি শুনেছি। তবে সুফিয়ার পরিবার থেকে কেউ এখনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। করলে বিষয়টি দেখা হবে।’