Ajker Patrika
হোম > অর্থনীতি > নতুন উদ্যোগ

ভেজালমুক্ত খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই ‘যোগান’-এর জন্ম

মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা

ভেজালমুক্ত খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই ‘যোগান’-এর জন্ম

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও নানা বাস্তবতার কারণে কৃষি নিয়ে তেমন কেউ স্বপ্ন দেখে না। অথচ সভ্যতার সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক অনাদিকালের। কৃষিসভ্যতার শুরু থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের জীবনপ্রবাহে কৃষি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো খাদ্য। অথচ দেশের খাদ্যব্যবস্থা পুরোপুরি করপোরেট পুঁজিপতিদের হাতে জিম্মি। খাবারে ভেজাল, খাবারের অতিরিক্ত মূল্য ইত্যাদির কারণে প্রতিনিয়ত মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতে হুমকির মুখে পড়ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ‘যোগান’-এর জন্ম। 

খাদ্যের প্রকৃতির গুণাগুণ অটুট রেখে তা সাধারণ মানুষের আওতার মধ্যে নিয়ে আসতেই ‘যোগান’-এর যাত্রা। অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘যোগান’-এর কর্ণধার মতিউর রহমান।। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মতিউর চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। 

নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মতিউর বলেন, ‘এখন মানুষ নিরাপদ খাদ্যের অভাবে অনেক বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। মানুষকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি নিরাপদ খাবারের চাহিদা মেটাতেই যোগানের জন্ম। আমরা ন্যায্যমূল্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে আসি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে এই মুহূর্তে অস্থায়ীভাবে তিনজন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে দুজন কৃষকের সঙ্গে কাজ করছেন। পণ্য সরবরাহে নিয়োজিত আছেন আরও তিনজন। এ বছর আমরা সুনামগঞ্জ জেলার হাওর ও বিলের মাছ সরবরাহ করব। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও সিলেট শহরে সরবরাহ করা হবে। বলে রাখা ভালো, যোগান প্রতিটি পণ্যের গুণগত মান ও মূল্যের যথার্থতায় নিশ্চয়তা দেয়।’ 

বাগান থেকে সংগৃহীত চা যোগান-এর শুরু সম্পর্কে মতিউর বলেন, 'যোগান-এর শুরুটা আমাদের শৈশব-কৈশোরের সেই দিনগুলোর মতোই। বর্ষায় এক পশলা বৃষ্টিতেই ছিমছাম হবিগঞ্জ শহরে হাঁটুপানি জমত। আমার জন্ম নানিবাড়ি; পুরোনো খোয়াই নদীর কোল ঘেঁষে। সে সময় প্রায় সবারই ছোট্ট একটা পুকুর ছিল। বর্ষায় বৃষ্টিতে ভাবতাম কবে মাঠে-বিলে কই মাছের দেখা পাব। নানির বাসার পাশে বকুল স্যারের বাসা। পুকুরের পাশে দুইটা বড় বড় বাঁশঝাড়। সেই পুকুরপাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া যেত হাঁসের ডিম। কিংবা বাড়িতে গেলেই সেজো চাচার সিন্ধি গাইয়ের (গাভীর) দুধ। আহা! আমাদের সেই দিনগুলো! শৈশবের এই স্বপ্নময় পরিবেশে বেড়ে ওঠা থেকেই ‘যোগান’-এর জন্ম। আর নির্ভেজাল, বিশুদ্ধ খাদ্যর যোগান দেওয়াই ‘যোগান’-এর মূল লক্ষ্য।’ 

মতিউর তাঁর জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছেন। পরিবার থেকে পেয়েছেন অনেক কষ্ট। কথা বলতে বলতে কষ্টের সেই জায়গা থেকে বলেন, ‘কৈশোরেই বাবাকে হারাই। আমরা চার ভাইবোন। পরিবারে আমিই বড় সন্তান। বাবার ভূ-সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও চরম সংকটে আমাদের পড়তে হয়। ২০০৩ সালে এসএসসি পাস করে টিউশন দিয়ে কর্মজীবন শুরু। কিন্তু সবার বেলায় হিসাব-নিকাশ ঠিক থাকলেও আমার বেলায় তেমনটা ঘটেনি। এ রকম বাস্তবতায় কেউ স্বপ্নবিলাসী হয় না। কিন্তু আমি বরাবরই ছিলাম স্বাধীনচেতা। এখনো মনে পড়ে পরিবারের গুরুজনেরা যখন জিজ্ঞেস করতেন—“বড় হয়ে কী হতে চাও।” বলতাম, “ব্যবসায়ী হতে চাই। ” শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিতে গড়পড়তা রেজাল্ট নিয়ে এমসি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করি। সেখানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ছিল প্রায় তিন বছরের সেশনজট।’ 

মতিউর যেন গল্পে ডুবে যান। বলে চলেন, ‘পেছনে ফিরে দেখি স্বপ্নের মতো ২৭টি বছর হারিয়ে ফেলেছি। ফলে চাকরি করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে চরম হতাশা কাজ করছিল। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি কোনো সরকারি পরীক্ষার জন্য একটিবারও ফরম পূরণ করিনি। ছোটবেলা থেকে স্বাধীনভাবে কিছু করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মাস্টার্স পাসের পর কিছু করতে না পেরে হতাশায় পেয়ে বসল। মন খারাপের একপর্যায়ে ময়মনসিংহের একজন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণায় শুরু করলাম নিরাপদ মসলা সরবরাহ। পুঁজি না থাকায় নিজে মেশিন কিনে মসলা ভাঙানোর কাজটা শুরু করতে পারলাম না। ফলে বিগত দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে ব্যবসায়ের ধরনটা পরিবর্তন করলাম। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেলাম বন্ধু লাইফ পার্টনার বিশ্বপা মৌকে। সঙ্গে কয়েকজন তরুণ, যারা স্বেচ্ছাসেবকের মতো আমাকে সহযোগিতা করে। সবচেয়ে বেশি শ্রম ও আইডিয়া দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমার মা।’ 

মতিউর উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন মা ও তাঁর জীবনসঙ্গী বিশ্বপার কাছে থেকে। বিশ্বপাও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বর্তমানে ‘যোগান’ শক্ত হাতে পরিচালনা করছেন বিশ্বপা। কাজের সুবিধার্থে ‘যোগান’-এর ৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, যেখানে সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন বিশ্বপা, মাঠ পরিকল্পনাকারী হিসেবে সপ্তর্ষি, বিক্রি ও বিপণনে আশিস, সন্দীপ এবং মতিউর সার্বিকভাবে বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করেন। ‘যোগান’ এখন গুড়, চা, লাল আটা, মধু, মসলা, ঘি ইত্যাদি সরবরাহ করে। এ ছাড়া বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে আম। 

নিজেদের স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে শুরু হয় এই উদ্যোগ। এখন প্রতি মাসে আমরা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ করছি। আশা করছি এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সোনালী ব্যাংক জিন্দাবাজার থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছি। যোগান-এর উদ্যোগে খুব শিগগিরই সুনামগঞ্জ শহরে একটি গোডাউন করব। এই মাসে আমরা ভ্রাম্যমাণ প্রক্রিয়ায় বিলের মাছ প্রাথমিকভাবে বিক্রি শুরু করব, যেখানে দেশি বোয়াল, চিতল, শোল, গজার, শিং, মাগুর, কাতল, বাইন, কাইক্কাসহ দেশীয় মাছ থাকবে। এটি ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।’ 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মতিউর বলেন, ‘আমাদের আগামীর পরিকল্পনা—সকলের তরে সকলে আমরা। বুঝিয়ে বলি। আমাদের লভ্যাংশ আমরা আমাদের টিম মেম্বারদের মধ্যে সমভাবে বণ্টনের পরিকল্পনা করেছি। ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানকে আমরা সামাজিক মালিকানায় নিতে চাই। ভবিষ্যতে গ্রামে কৃষকদের দিয়ে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে চাই। ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামকে আমরা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছি। সেখানকার কৃষকেরা সরাসরি যোগান-এর মাধ্যমে তাঁদের উৎপাদিত হাঁস-মুরগি, ডিম ও বিষমুক্ত সবজি বিক্রি করবেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মসলার মেশিন স্থাপন করব। আর এপ্রিল মাসে আমরা মসলা ভাঙানো শুরু করব।’ 

সুচিকিৎসা জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের বরণ অনুষ্ঠান

এক ডলারের ‘ফেনা চা’ বেচেই বিলিয়নিয়ার ২ ভাই

অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ‘টেক ট্রিপের’ আত্মপ্রকাশ

সাইকেলে বিরিয়ানি, ফোন করলেই দুয়ারে হাজির

ঋণ নেওয়া যাবে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও

জেসিআই টিওওয়াইপি পুরস্কার পেলেন ১০ তরুণ

নারী উদ্যোক্তাদের ঈদের মিষ্টি

ঘরে তৈরি কেক বিক্রি করে লাখ টাকা আয় সাথীর

পরিবারের হাল ধরেছেন নারী উদ্যোক্তা সাদিয়া

দেশি আচারের স্বাদ ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে শুরু হয় ‘মৃ আচার’