নাদিয়া পারভীন জুথী। একজন সফল উদ্যোক্তা। নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে থাকতে পছন্দ করেন। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছেন মা, খালারা পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য বেশির ভাগ সময়ই পরতেন জামদানি শাড়ি। তাই ছোটবেলা থেকে জামদানি শাড়ির প্রতি জুথীর এক অন্য রকম ভালোবাসা কাজ করত। জীবনের কঠিন এক সময়ের মুখোমুখি হয়ে সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হিসেবে জামদানি নিয়ে কাজ শুরু করবেন।
নারী উদ্যোক্তা নাদিয়া পারভিন বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে মাস্টার্স করছেন। ২০১৭ সালে তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ক্যামব্রিয়ান কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। চোখে তখন তাঁর অপার স্বপ্ন, আর মনে ছিল দৃঢ়প্রত্যয়। সংসারের যাবতীয় কাজের পাশাপাশি সমানতালে করতেন চাকরি। ২০১৯ সালে জুথীর সংসার আলো করে আসে সন্তান। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে মেনে নেন অনেক কিছু। শুরু হয় মাতৃত্বকালীন ছুটি।
ঠিক এ সময় পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে মহামারি করোনা। বাংলাদেশও এ থেকে রক্ষা পেল না। করোনা থেকে রক্ষা পেতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে থমকে গেল অনেকের জীবন। এই অনেকের মধ্যে একজন ছিলেন নাদিয়া পারভীন জুথী।
ব্যবসা করার জন্য অনেক কিছু থাকতে জামদানি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে জুথী বলেন, ‘কোনো এক অজানা কারণে জামদানির প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল অগাধ। জামদানি শাড়ি আমাদের দেশের ঐতিহ্য। জামদানি শাড়ির বুনন পদ্ধতি অন্য সব শাড়ির চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। বর্তমানে দেশের বাজারে ক্রমেই জামদানি শাড়ির কদর বাড়ছে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও এর প্রসার হচ্ছে। নিতান্তই শখের বশে শুরু করা আমার উদ্যোগ এত স্বল্প সময়ে এতটা বিস্তৃত হবে—এটা আমার ভাবনার মধ্যে ছিল না। এখন আমি খুব খুশি এই ভেবে যে, আমাদের ঐতিহ্য জামদানিকে আমরা অনেকের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি।’
বাঙালি নারীদের প্রিয় পোশাক জামদানি। একটা সময় জামদানি বলতে শুধু শাড়িকেই বোঝানো হতো। তবে এখন জামদানি থেকে তৈরি করা হচ্ছে অনেক কিছু। ‘আনাবিয়া’-এর সদস্যেরা মূলত তাঁতে বোনা জামদানি নিয়ে কাজ করেন। জামদানি শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস ‘আনাবিয়া’-এর নিয়মিত পণ্য। কিন্তু বর্তমানে এখানকার সদস্যরা বৈচিত্র্য আনতে শুরু করেছেন জামদানি নিয়ে অন্যান্য পণ্য তৈরির কাজ। এর মধ্যে জামদানি মাস্ক, জামদানি গয়না, জামদানি বেবি ড্রেস, বেবি রেডি শাড়ি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।