হোম > অপরাধ > ঢাকা

‘যেদিন তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়, সেদিনই আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলেন’

সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)

স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া (৪৭) ঢাকার তেজগাঁও থানার ডমিসাইল এলাকায় স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে ও তাঁর মাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা এলাকায়। ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির অন্দরসজ্জার কাজ করতেন। এ সম্পর্কিত নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ নিয়ে ৮ মার্চ স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ইমতিয়াজ নিখোঁজের বিষয় নিয়ে গত শুক্রবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদটি প্রচার করা হয়। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই খবরের ফেসবুক পোস্টের নিচে এক ব্যক্তি কমেন্টে জানান, সংবাদে প্রচার করা বর্ণনা ও চেহারার একটি লাশ সিরাজদিখানে পাওয়া গেছে। এভাবেই ইমতিয়াজের সন্ধান পায় পরিবার।

ইমতিয়াজের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার বলেন, ‘গত ৭ মার্চ নকশার ফটোকপি করতে মাত্র ২০০ টাকা নিয়ে ইমতিয়াজ বাড়ি থেকে বের হন। বিকেলে বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনতে ৪টা ২০ মিনিট থেকে ৪টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত তাঁকে ২০ বার ফোন দিই। তিনি রিসিভ করেননি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আবার কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করি।’

গত ৮ মার্চ সন্ধ্যায় সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের মরিচা সেতু এলাকার ঝোপ থেকে এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর দিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর করা হয়। সে দিন বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাখালী গোরস্থানে দাফন করা হয়। পরে এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনের জের ধরে ফেসবুক এক ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে লাশটি স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার বলে শনাক্ত করেন তাঁর পরিবার। সিরাজদিখান থানা লাশটি পাওয়ার পর ছবি ও অন্যান্য তথ্য কলাবাগান থানা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন থানায় পাঠিয়েছিল। তবে কলাবাগান থানা বলছে, তারা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পায়নি।

বার্তা পেয়েও কলাবাগান থানা সেটা শনাক্ত করতে পারল না কেন? এমন প্রশ্ন ছিল ইমতিয়াজ নিখোঁজের জিডির তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলামের কাছে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো বার্তা আসেনি। সিরাজদিখান থানা কোনো বার্তা পাঠালে আমাদের কাছে সেটার ডকুমেন্ট থাকবে। তাঁদের কাছেও থাকবে। আমরা কলাবাগান থানা নই, সিরাজদিখানের পার্শ্ববর্তী থানাগুলোতে যেমন, কদমতলী, ওয়ারীসহ অন্যান্য থানাগুলোতেও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। বার্তা পাঠালে আমরা পাবো না কেন?’

সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত বলেন, ‘লাশের গায়ে হত্যার আলামত ছিল। এটি হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় মামলা করা হয়। লাশ দাফনের আগে তেজগাঁও, কলাবাগান থানাসহ ১৫টি থানায় বার্তা পাঠানো হয়। তবে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।’

ফাহমিদা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তানগুলো প্রতিদিন দরজার দিকে তাকিয়ে থাকত। কলিং বেল বাজলে দৌড়ে দরজায় যেত। স্বামীর খবর পেলাম। তবে লাশ হিসেবে। সেই লাশটিও আইনি জটিলতার জন্য নিতে পারছি না। রোববার সিরাজদিখান থানায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাদের পরামর্শে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি। সেখানে বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) কামরুল ইসলাম খানের কাছে দেন। তবে তিনি আইনি জটিলতার জন্য কিছু করেননি। এরপর আজ সোমবার দুপুরে সিরাজদিখান আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করি।’

উল্লেখ্য, আজ সন্ধ্যায় আদালত লাশ উত্তোলনের আদেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত হয়েছে। হত্যা মামলা করে আদালতের অনুমতি নিয়ে লাশও দাফন করা হয়েছে। এ অবস্থায় লাশ উত্তোলনে আইনি জটিলতা রয়েছে। আদালত অনুমতি দিলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইমতিয়াজের স্ত্রী ও স্বজনদের সঙ্গে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় নিহতের ভাগনি মুনমুন হোসাইন বলেন, ‘আমার মামা গ্রামের বাড়িতে বড় মসজিদ, বড় কবরস্থান করেছেন। সেই মামাকেই বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। মামা নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের পরে লাশ হয়ে গেলেন। অথচ আমরা জানলাম না। মামার লাশটি গ্রামে নিয়ে দাফন করার জন্য থানা, আদালত, প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। লাশটিও নিতে পারছি না।’

মুনমুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘লাশ পাওয়ার একদিন পর ময়নাতদন্ত হলো। হত্যা মামলা করে একদিনের মধ্যেই দাফন করা হলো। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের বিষয়টি থানা থেকে পার্শ্ববর্তী থানাগুলোকে জানানো হয়েছিল কি না? যদি জানানো হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের তেজগাঁও, কলাবাগান থানা কেন বিষয়টি খতিয়ে দেখল না। যদি তারা একটু গুরুত্ব দিতেন তাহলে অন্তত লাশটা ফিরে পেতাম।’

ইমতিয়াজের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার আহাজারি করে বলেন, ‘যে দিন তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল, সেদিনই তিনি আমার থেকে হারিয়ে গেলেন। আমি আমার স্বামীর লাশটা ধরে দেখতে পারলাম না। আমর সন্তানেরা বড় হবে, ওরা ওর বাবার সমাধি দেখতে চাইবে। লাশটা নিতে না পারলে আমি তখন কী জবাব দিব!’

অপ্রশস্ত সেতুতে ভোগান্তি

ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসুর বিরুদ্ধে থানায় জিডি

সিটি গ্রুপের ভোজ্যতেলের কারখানা পরিদর্শনে ভোক্তা-অধিকারের কর্মকর্তারা

আন্তকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের সাফল্য

পদ্মা নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার

ব্রির ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা শুরু

সিরাজদিখানে কুকুরের কামড়ে ৫ শিশুসহ আহত ১৫

সাবেক এমপির নামফলক ভেঙে গণপিটুনি খেলেন শ্রমিক দল নেতা

নাগরপুরে আ.লীগ নেতা কুদরত আলী গ্রেপ্তার

ইসমাইলের মৃত্যু: ডেলটা হেলথ কেয়ারের চিকিৎসকসহ ৫ জন কারাগারে

সেকশন