করোনার কারণে প্রায় দুই বছর আলো জ্বলেনি দেশের সিনেমা হলে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর হলগুলো খুলতে শুরু করলেও পড়েছে মানসম্মত ছবিসংকটে। বড় বাজেটের একাধিক ছবি তৈরি হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে দর্শক হলে আসবেন কি না, এমন শঙ্কায় ছবিগুলো মুক্তি দিতে সাহস করছেন না প্রযোজকেরা। শুরুর দিকে পুরোনো ছবি চালিয়ে হলে দর্শক টানার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। গত দুই সপ্তাহে নতুন দুটি ছবি ‘চোখ’ ও ‘পদ্মাপুরাণ’ মুক্তি পেলেও অতটা সাড়া মিলছে না। তাই প্রযোজক-পরিবেশক-হলমালিকেরা বলছেন, এখন হল বাঁচাতে ভরসা বিদেশি ছবি।
গত কয়েক মাস বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি এবং হলমালিকেরা দাবি করে আসছিলেন, দেশের হলে ভারতীয় ছবি চালানোর অনুমতির জন্য। বছরে অন্তত ১০টি ভারতীয় ছবি যেন বাংলাদেশে মুক্তি পায়, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এমন আবেদন জানিয়েছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এমনকি ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি ভাষার ছবি আনতে আমদানির শর্ত সহজ করারও দাবি ছিল তাদের।
তবে এখনই হিন্দি ছবি আনার প্রক্রিয়া চালু না হলেও বিনিময় চুক্তিতে আসছে ‘বাজি’। জিৎ-মিমি অভিনীত এ ছবিটি ভারতে মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। পরিকল্পনা ছিল, একই দিনে বাংলাদেশেও ‘বাজি’ দেখানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। জিতের ‘বাজি’ ছবির বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছে ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘রাত্রির যাত্রী’।
অন্যদিকে ‘বাজি’ দিয়ে দীর্ঘদিন পর খুলছে মধুমিতা সিনেমা হল। ‘মধুমিতা’র কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘এ ছবিটা এসেছে বিনিময়ের মাধ্যমে। সরাসরি আসেনি। সরাসরি আমদানির পথ খুলে দিতে হবে। ছবি নেই তো। হল চলবে কীভাবে? আমাদের ভালো ছবি দরকার। বছরে ৩২ সপ্তাহ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত ছবি যদি পাই, তাহলে আমাদের ভারতীয় ছবি লাগবে না। কিন্তু অত ছবি কোথায়, যেগুলো দেখতে দর্শক হলে আসবে? ফলে ভারতীয় ছবির ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় দেখছি না।’
বিগত বছরগুলোয় আমদানি করা ভারতীয় ছবির দিকে তাকালে দেখা যায়, বেশির ভাগ ছবিই বক্স অফিসে অত ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। তাই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের শূন্য হল আবার পূর্ণ করতে পারবে ভারতীয় ছবি? জবাবে প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘কী করে বলি, হল আবার সচল হবে কিনা! তবে আমরা আশা করছি। যদি দর্শক যায়, তাহলেই সিনেমা হল সচল হবে। এখন ছবির অভাব সবচেয়ে বেশি। দর্শক তো হলে নাই। হল থেকে বেরিয়ে গেছেন তাঁরা। তাঁদের ফেরানোর জন্য মানসম্মত ছবির বিকল্প নেই।’
ছবির অভাবে ব্যবসায়িক মন্দার কারণে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। তাই হল বাঁচাতে বাণিজ্যিক ছবি চান হলমালিকেরা। তাঁদের প্রথম পছন্দ দেশীয় চলচ্চিত্র। কিন্তু দেশীয় নির্মাতারা হলের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না বলেই বিদেশি ছবির কথা ভাবছেন হলমালিকেরা। যেহেতু ভারতে বড় বাজেটের বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে, সেগুলোর দর্শকও আছে এখানে, তাই আমদানি করা ছবিগুলো দর্শকদের হলে ফেরাতে পারবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।