আজ গল্প হবে পর্বত নিয়ে। কারণ আজ দিনটি পর্বতের। ১১ ডিসেম্বর হলো আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।
দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো, আমাদের জীবনে পর্বতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, পর্বতের উন্নয়নের সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা এবং বিশ্বব্যাপী একটি সাধারণ জনমত তৈরি করা যা মানুষের মধ্যে পর্বতের পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে।
পর্বত যে আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ তাতে সন্দেহ নেই। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ শতাংশের বাস পর্বতে। পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হটস্পটগুলোর মোটামুটি অর্ধেকের অবস্থান পর্বতে। পাশাপাশি বিপুল বিশুদ্ধ পানির সরবরাহকারীও পর্বত।
এ বছর বিশ্ব পর্বত দিবস ১১ ডিসেম্বর পড়েছে সোমবার। এবারকার পর্বত দিবসের প্রতিপাদ্য পর্বতের বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমকে পুনরুদ্ধার করা।
জাতিসংঘের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত বর্ষ ধারণাটির সূচনা করে। পরবর্তীতে, ২০০২ সালে টেকসই পর্বত উন্নয়ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমস্যাগুলির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পর্বত বর্ষকে চিহ্নিত করা হয়। ২০০২ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ১১ ডিসেম্বর তারিখটিকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে চূড়ান্ত করে। এ সময় টেকসই পাহাড় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তারপর ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রথম আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালন করা হয়। প্রতি বছর, এই দিনটির জন্য একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। এগুলোতে মিষ্টি পানি, শান্তি, জীববৈচিত্র্য বা জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে আলোকপাত করে।
পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ২৭ শতাংশ জুড়ে আছে পর্বতগুলো। মানবজাতির আনুমানিক অর্ধেককে মিষ্টি জল সরবরাহ করে পর্বত। এ ছাড়াও গাছপালা এবং প্রাণীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। ভাষা ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়ের আবাসস্থলও এগুলো। তবুও পর্বতগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধুঁকছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালন করা গুরুত্বপূর্ণ।
মজার ব্যাপার হলো, সাগর তল থেকে যদি আপনি হিসেব শুরু করেন তবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বত কিন্তু মাউন্ট এভারেস্ট নয় মাউনা কিয়া। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপের একটি নিষ্ক্রিয় আগ্নেয়গিরি একটি। সাগরতল থেকে পরিমাপ করলে মাউনা কিয়ার উচ্চতা ১০ হাজার ২০৩ মিটার বা ৩৩ হাজার ৪৭৪ ফুট। যদিও এর সমুদ্রের ওপরের অংশের উচ্চতা ৪ হাজার ২০৫ মিটার বা ১৩ হাজার ৭৯৬ ফুট।
বেশির ভাগ সূত্রমতে সাগর সমতল থেকে ৬১০ মিটার ২০০০ ফুট উচ্চতার হলে তাকে পর্বত বলা যায়। সে হিসেবে সাকা হাফং, মদক মুয়াল, যোগী হাফং, কেওক্রাডং, দুমলংসহ বেশ কিছু পর্বত বা পর্বতশৃঙ্গের দেখা মেলে আমাদের দেশে। এগুলো যে আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আশা করি পরিষ্কার করতে পেরেছি। তাই পর্বতগুলির পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবারই চেষ্টা করা উচিত।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ব্রিটানিকা