হাঁটুপানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন সাদা পায়জামা–পাঞ্জাবি, টুপি পরিহিত এক বয়স্ক ব্যক্তি, দেখে মনে হচ্ছে নামাজ পড়ছেন তিনি। ব্যক্তিটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। এমন একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবির এ ব্যক্তি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম থেকে ফেনী রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নামাজের সময় প্রায় শেষের দিকে, তাই পানিতেই নামাজ আদায় করেন আমিরে জামায়াত।’
ভাইরাল ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির মাথায় থাকা টুপিটির সঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান সাধারণত যে ধরনের টুপি পরেন, তার মিল নেই। এ ধরনের টুপি সাধারণত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অনুসারীদের পরতে দেখা যায়।
পরে ছবির ব্যক্তির পরিচয় অনুসন্ধানে ‘খন্দকার ফয়সাল বিন মোস্তফা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আজ মঙ্গলবার পোস্ট করা ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে ওই ব্যক্তিকে নামাজ পড়তে দেখা যাচ্ছে। সেখানে আরও দুই ব্যক্তিকেও নামাজ পড়তে দেখা যায়। এই দুই ব্যক্তির গায়ে পরিহিত সেফটি ভেস্টে বাংলা ও আরবি হরফে ‘খেদমত’ লেখা যায়। এই লেখার পাশেই হাতপাখাসদৃশ একটি লোগো এবং এর নিচে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চরমোনাইয়ের প্রয়াত পির সৈয়দ ফজলুল করিমের নাম দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটিতে সেফটি ভেস্ট ছাড়া নামাজরত ব্যক্তিটির পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগরের সেক্রেটারি আল মাহমুদ ইকবাল। হাতপাখা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দলীয় প্রতীক।
এই ভিডিওর সূত্রে নজরুল ইসলাম নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। নজরুল ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন কর্মী। নামাজরত ব্যক্তি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান— এমন দাবিতে ভাইরাল ছবি সম্পর্কে তিনি পোস্টে লেখেন, ‘মিথ্যাচারের রাজনীতি বন্ধ হোক, যার কর্ম সে প্রচার করুন সমস্যা নেই। ইসলামী আন্দোলনের মহানগর নেতাদের আমিরে জামায়াত বানানোর খুব প্রয়োজন হয়েছে নাকি? ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের ত্যাগী নেতা মো. আল ইকবাল ভাইয়ের ফটো দিয়ে আমিরে জামায়াত বলে চালিয়ে দিচ্ছে। পোশাক ও চেহারা দেখলেই বুঝবেন আদৌও সে জামায়াতের আমির নয়।’
পোস্টটিতে তিনি আল মাহমুদ ইকবালের মুখমণ্ডল চিহ্নিত করে একটি ছবিও যুক্ত করেছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আজ পোস্ট করা ছবিতেও একই ব্যক্তির উপস্থিতি পাওয়া যায়। পোস্টটি কুমিল্লার লাকসামের দক্ষিণ বাইপাস ও সোনাইমুড়ী হামিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ সম্পর্কিত।
সুতরাং এটি নিশ্চিত যে, হাঁটুপানির মধ্যে নামাজরত ব্যক্তিটি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নন।