চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন আনসার বাহিনীর অঙ্গীভূত সদস্যরা। গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) বিভিন্ন সময়ে আনুমানিক ১০ হাজার আনসার সদস্য একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় ঘেরাও করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাতজন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেন।
উত্তেজিত আনসার সদস্যদের শান্ত করার জন্য বিকেলে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক সচিবালয়ে আসেন এবং আনসার সদস্যদের দাবি মেনে নেন। আনসার সদস্যদের সমন্বয়ক আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু তাঁদের একাংশ সচিবালয় এলাকা ত্যাগ না করে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে একদল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা করেন। সচিবালয়ের সামনে তাঁদের আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সংঘর্ষে শিক্ষার্থী, আনসার সদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে দুজন আনসার সদস্যের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের হামলায় এই দুই আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন।
ছবি ১:
আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য যুব মহিলা লীগের সভাপতি ইয়াসমিন সুলতানা পোলেন আজ সোমবার (২৬ আগস্ট) তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ আনসারের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আনসার পিটিয়ে হত্যা করার পর হাসনাত ভং ধরেছে নিজেকে হত্যা মামলা থেকে রক্ষা করতে। আসিফ নজরুল সাফাই দিচ্ছে মিডিয়াতে।’
তাঁর পোস্ট করা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, আনসারের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের মরদেহ বহনের ব্যাগ বিছিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে। পাশে এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর পা–ও দেখা যাচ্ছে। পোলেন তাঁর পোস্টটিতে আরও লেখেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে হাসনাত এবং সারজিস আলমের বিরুদ্ধে। তারাই কৌশল করে তাদের পেটোয়া সমন্বয়কদের ডেকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
একই ছবি ফেসবুকে আরও বিভিন্ন পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে একই দাবিতে পোস্ট করা হচ্ছে।
আনসারের পোশাক পরিহিত ওই ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, ‘ফেনীতে মোবাইল সংযোগ এখনো পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় আমাদের টিমগুলোর সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’
তিনি ফেনী ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে ফেনী ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষে একাধিকবার কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি।
ফেসবুকে পাওয়া তথ্যের সূত্রে আনসার ও ভিডিপির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমান্ড্যান্ট মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘ওয়াহিদুর রহমানের মৃত্যুর দাবিটি ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ওয়াহিদ বা তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তাই এটি নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না, আনসারের পোশাক পরিহিত মরদেহটি ওয়াহিদুর রহমানের কি না—তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
তিনি নিশ্চিত করেন, ওয়াহিদুর রহমান নামে এক আনসার সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাওয়ার ১–এ কর্মরত। বর্তমানে তিনি ছুটিতে।
জেলা কমান্ড্যান্ট মো. ইসমাইল হোসেন আরও জানান, ওয়াহিদুর রহমান নামে ওই আনসার সদস্য ২০ আগস্ট ছুটিতে গেছেন। তাঁর বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর করইয়া গ্রামে। তিনি যাওয়ার সময় ইউনিফরম রেখে গেছেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে মৃতদেহকে ইউনিফরম পরিহিত দেখা যাচ্ছেন। মরদেহটি ওয়াহিদুর রহমানের হয়ে থাকলে তিনি ইউনিফরম কোথায় পেলেন। আর মৃতদেহের মুখে দেখে শনাক্ত করার উপায়ও নেই।
ইয়াসমিন সুলতানা পোলেনের পেজে আজ বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ আরেকটি পোস্ট দিয়ে দাবি করা হয়, গতকাল মোট ২৭ জন আনসার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ‘দয়া করে কোনো লিংক চাইবেন না।’
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে এই তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। আজকের পত্রিকার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্রতিনিধি সৈয়দ সোহেল জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজনের মতো আনসার সদস্য চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাঁরা ইতিমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।
ছবি ২:
‘বাংলাদেশ পরাদিন’ নামের আরেকটি পেজ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের উসকানিতে এক আনসার সদস্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে’ দাবিতে দুটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত ১টা ৪৮ মিনিটে দুটি ছবি পোস্ট করে এমন দাবি করা হয়। ছবি দুটির একটিতে দেখা যাচ্ছে, অক্সিজেন মাস্ক পরে এক আনসার সদস্য হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। আরেকটি ছবিতে এই আনসার সদস্যের পরিচয়পত্রের ছবি দেখা যাচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এই আনসার সদস্যের নাম আফজাল হোসেইন।