বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন ঘটেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের। এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মোর্চা— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও সারজিস আলম ফেসবুকে সরব এবং আন্দোলন সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচির আপডেট দিচ্ছেন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে (সাবেক টুইটার) সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, সারজিস আলম বলেছেন, ‘আগামীর রাষ্ট্র হবে ইসলাম, সংবিধান হবে আল কোরআন–ইনশাআল্লাহ।’
‘অপ ইন্ডিয়া’ নামে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমেও সারজিস আলমের কথিত পোস্টের একটি টুইট যুক্ত করা হয়েছে।
একই ধরনের কিছু ফেসবুক পোস্ট ছড়িয়েছে সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের নামে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও। আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) আসিফ মাহমুদের নামে খোলা একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লেখা হয়, ‘আগামীর রাষ্ট্র হবে ইসলাম, সংবিধান হবে আল কোরআন–ইনশাআল্লা।’ ১টা ৪২ মিনিটে দেওয়া আরেকটি পোস্টে লেখা, ‘দেশে আসছেন সবার পরিচিত মুখ প্রিয় ড. মিজানুর রহমান আজহারী।’ গত রাতে বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ সক্রিয় থাকায় সবাই সবার স্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়।
মিজানুর রহমান আজহারীর দেশে আসা বা রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে আসিফ মাহমুদের করা কথিত পোস্টগুলো দেওয়া অ্যাকাউন্টটি যাচাই করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে ফলোয়ার সংখ্যা ৮০ হাজার। পরিচয়ে বলা হয়েছে, এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের অ্যাকাউন্ট। অ্যাকাউন্টটি ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর খোলা হয়েছে। এসব তথ্যের বাইরে অ্যাকাউন্টটি সম্পর্কে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরে অ্যাকাউন্টটি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে আন্দোলন সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচির আপডেট দেওয়া সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। এই অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার সংখ্যা ৭ লাখ ৯৩ হাজার। অ্যাকাউন্টটিতে আসিফ মাহমুদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
তথ্যানুযায়ী, তিনি ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী। অ্যাকাউন্টটিতে গত সোমবার (৪ আগস্ট) একটি পোস্ট দিয়ে জানান, ‘এটা আমার একমাত্র ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং এটা পেজ। আমার নামে অন্য কোনো পেজ কিংবা আইডির ঘোষণায় বিভ্রান্ত হবেন না।’
সারজিস আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যাচাই
রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টটির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রোফাইলে সারজিস আলমের একই ছবি ব্যবহার করে অন্তত ৫০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ফলোয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্নসংখ্যক ফলোয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ হাজার ফলোয়ারের একটি ধর্মীয় বিভিন্ন পোস্ট দিতে দেখা যায়। অ্যাকাউন্টটিতে বেশ কিছু রাজনৈতিক উসকানিমূলক পোস্ট দিতেও দেখা যায়।
গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) জাতীয় পার্টি নেতা জিএম কাদেরকে নিয়ে একটি পোস্ট দিয়ে লেখা হয়, ‘জিএম কাদেরকেও ছেড়ে দেওয়া যাবে না সে দিল্লির দাস। তার ওপর ভর করে এত দিন খুনি হাসিনা টিকে ছিল।’ এ ছাড়া ভুল তথ্যও শেয়ার দিতে দেখা যায় অ্যাকাউন্টটি থেকে। এর মধ্যে সংসদ ভবনে গণকবর পাওয়ার মতো দাবিও।
লাইভে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ফেসবুকে আমার নামে ৫০টির বেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। এই অ্যাকাউন্ট ছাড়া আমার আর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ নেই।’ লাইভে তিনি তার নামে খোলা ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো আনফলো করে দিতেও অনুরোধ করেছেন।
সংসদ ভবন বা গণভবনে গণকবর পাওয়ার দাবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গতকাল ছাত্র-জনতার ঢল নামে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ও সংসদ ভবনে। এমন পরিস্থিতিতে গত রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভিডিওতে দাবি করা হয়, গণভবনে গণকবর পাওয়া গেছে। আবার কোনো কোনো ভিডিওতে দাবি করা হয়, সংসদ ভবনে গণকবর পাওয়া গেছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগের বাংলাদেশ এডিটর কদরুদ্দিন শিশির গতকাল রাতেই একটি পোস্ট দিয়ে জানান, ‘আমি ২ ঘণ্টা আরও ৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে সংসদ ভবন এবং গণভবন ঘুরে কোন গণকবরের সন্ধান পাইনি এবং আরও অনেকেই পাননি।’
ধারণা করা হচ্ছে, ‘বই-খাতাগুলো কেউ ফেলে রেখে গেছে। আমরা একটা গন্ধ পেয়েছি। তবে আমরা কোনো কবরের সন্ধান পাই নাই। আর যে গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট কোনো জায়গা থেকেও আসছে না। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো মৃত প্রাণীর গন্ধ হতে পারে। সুতরাং সংসদ ভবনে গণকববের সন্ধানের বিষয়টা গুজব।’