ছাগলের পেট থেকে গরুর বাচ্চা জন্মেছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ছবি দুটিতে মাটিতে শুয়ে থাকা একটি সদ্যোজাত বাচ্চার ছবি এবং একটি ছাগলের ছবি দেখা যাচ্ছে। পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর জেলার সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া দাবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে ‘বিজ্ঞানভিত্তিক এই পোস্টে বিজ্ঞান কই’ ফেসবুক গ্রুপে আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ১৩ মিনিটে দেওয়া একটি পোস্ট নজরে আসে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগের। পোস্টটিতে মনিরুজ্জামান নামে একজন ব্যক্তি ভাইরাল ছবিটির সত্যতা জানতে চান।
পোস্টটির কমেন্টবক্সে শ্রাবণ ওয়াহিদ রাতুল নামে একজন লিখেন, ‘তিলরে তাল বানায়েন না। এইটা আমাদের এলাকায়। মূলত ছাগলটা উচ্চতায় বড় ছিল। আর ছাগলের পেট থেকে ছাগলের বাচ্চাটাও স্বাভাবিকভাবেই বড় হইছে। তাই সবাই এইটাকে অতিরঞ্জিত করে গরুর বাচ্চা বলতেছে।’
এই কমেন্টের সূত্রে ঘটনাটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে আজকের পত্রিকার শেরপুর সদর উপজেলা প্রতিনিধি জুবাইদুল ইসলামের সহযোগিতা নেওয়া হয়। তিনি ঘটনাস্থল সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ নেন।
ছাগলের মালিক সদর উপজেলার কুসুমহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, গত বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তাঁর পালিত একটি ক্রসবিড ছাগলের দুটি বাচ্চা হয়। এর মধ্যে একটি স্বাভাবিক ছাগলের বাচ্চার মতো হলেও আরেকটি বাচ্চা দেখতে অনেক বড়সড় ও বাছুর আকৃতির মতো দেখা যায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজন ছাগলের বাচ্চাটিকে দেখার জন্য ভিড় করেন।
মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ছাগলটি এর আগে আরও দুইবার স্বাভাবিক ও সুস্থ বাচ্চা প্রসব করেছে। তবে এবার দুটি বাচ্চা প্রসব করলে একটি বাচ্চাকে ব্যতিক্রম ও বড় দেখা যায়। অনেকেই বাচ্চাটিকে দেখে বলছেন, গরুর বাচ্চা, আবার অনেকেই বলছেন ছাগল। কেউ কেউ ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। বাচ্চাটা দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছে। পরে আমরা সেটি মাটিচাপা দিয়ে দিছি।’
মো. শাহিন মিয়া নামে একজন স্থানীয় বলেন, ‘বাজার থেকে বাড়িতে এসে শুনি ছাগলের পেট থেকে গরুর বাচ্চা হয়েছে। পরে বকর কাকার বাড়িতে গিয়ে দেখি দুইটা বাচ্চা হইছে, একটা ছাগলের বাচ্চাই। আরেকটা গরুর বাছুরের মতো দেখা যায়। পরে ছবি আর ভিডিও করে ফেসবুকে ছাড়ছি। এরপর অনেকেই এসে বাচ্চাটিকে দেখে গেছে।’
ছাগলের মালিক ও স্থানীয়দের বক্তব্য মতে, ছাগলটির দুটি বাচ্চার মধ্যে একটি বাচ্চা স্বাভাবিক হলেও অন্যটির শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক ছিল, দেখতে বাছুরে মতো। কিন্তু তাঁরা কেউ সরাসরি এটিকে বাছুর বলে দাবি করেননি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাচ্চাটি বাছুর দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
ছাগলের মালিকের বক্তব্য অনুযায়ী, ছাগলটি ক্রসব্রিড ছিল। অর্থাৎ এখানে ছাগলেরই অন্য কোনো জাতের সঙ্গে মা ছাগলটির প্রজনন ঘটানো হয়েছিল।
পরে এই বিষয়ে জানতে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেলেনা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা। তিনি বলেন, ‘ছাগলের পেট থেকে গরুর বাছুর হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। হয়তো ক্রসবিডের কারণে বাচ্চা বড় হতে পারে। ছাগলের বাচ্চাটি বেঁচে থাকলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যি বিষয়টি বুঝা যেত।’
একই বিষয়ে জানতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এম মনিরুল এইচ খানের সঙ্গেও যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ভাইরাল ছবিটি দেখে তিনি বলেন, ‘এটি ছাগলেরই বাচ্চা। ছাগল থেকে গরুর বাছুর জন্ম নেওয়া অসম্ভব।’
ফেসবুকে দাবিটি ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে কুমিল্লা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক খালেক হাসান তাঁর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আজ বেলা ১২টায় একটি পোস্ট দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জেনেটিক সমস্যা। জিনগত ব্যাধি হলো জিনোমের এক বা একাধিক অস্বাভাবিকতার কারণে সৃষ্ট একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি একটি একক জিন বা একাধিক জিনের মিউটেশন বা ক্রোমোজোম অস্বাভাবিকতার কারণে হতে পারে। তাই কোন এলাকায় যদি এ সমস্যা সংগঠিত হয়ে থাকে চিন্তিত না হয়ে, আপনার নিকটতম প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন।’