ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে টানা পাঁচ দিন ধরে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকা থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়া এই দাবানলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সানসেট ফায়ার’। ঝোড়ো বাতাসের কারণে আশপাশের এলাকায় আগুন আরও দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে। এই আগুন গত বুধবার হলিউড হিলসের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে। দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের শত শত ভবন পুড়ে গেছে এবং পুরো অঞ্চলজুড়ে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যুর তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে। হলিউড সাইনে (Hollywood Sign) আগুন লেগেছে দাবিতে একাধিক ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা, ‘হলিউড হিলে লাগছে একদম এবং এটা এখনো ধাওধাও করে জ্বলছে...।’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইংরেজি ভাষায় হলিউড লেখায় আগুন জ্বলছে।
একই ছবি দেশের কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন—দেশ রূপান্তর, দেশ রূপান্তর (ফেসবুক), সমকাল, চ্যানেল আই, হালফ্যাশন।
এ ছাড়া, গণমাধ্যমের বরাতে একই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।
ইফতেখার হোসাইন সীমান্ত (Iftekhar Hossain Simanto) নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বৃহস্পতিবারে (৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে দেওয়া পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ভাইরাল। আজকে শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই পোস্টে ৭৯২টি রিঅ্যাকশন পড়েছে এবং ৭৩টি শেয়ার হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ২৯ কমেন্ট করা হয়েছে। এসব পোস্টের কমেন্টে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি বাস্তব দাবিতে কমেন্ট করেছে। বৃষ্টি আক্তার (Bristy Akter) নামে অ্যাকাউন্ট লিখেছে, ‘পুরছে গাজা মরছে মানুষ। তা দেখতে দেখতে এই আগুন কেন জানি খুভ খারাপ লাগছে না।’
শুরুতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া দুটি ছবির প্রথমটি যাচাই করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে ডান দিকে নিচে ‘Grok xAI (গ্রোক এআই)’ লেখা দেখা যায়। Grok xAI লিখে গুগলে সার্চ করে দেখা যায়, এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিশেষায়িত টুল। এর সাহায্যে ছবি তৈরিসহ বিভিন্ন অ্যাডভান্স লেভেলের কাজ করা যায়।
ছবিটির বিষয়ে আরও জানতে আমরা ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ভ্যালু অ্যান্ড টাইম (Value & Time) নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে হলিউড সাইন পুড়ছে দাবিতে পোস্ট করা হয়।
পোস্টটির ডান দিকে Grok xAI-এর লোগোসহ একটি নোটিশ দেখা যায়। নোটিশে ক্লিক করলে এক্স কর্তৃপক্ষ থেকে জানায় ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুল দিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ছবিটির সত্যতা যাচাই করেতে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে আমরা জোয়েল ফিসচার (Joel Fischer) নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১১-এর দিকে পোস্ট করা হয়। এই আগুন কোনো মানুষ বা কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দিয়েছে কি না, তা তিনি এই পোস্টে জানতে চান।
এই পোস্টেরও ডান দিকে Grok xAI-এর লোগোসহ একটি নোটিশ দেখা যায়। নোটিশে ক্লিক করলে এক্স কর্তৃপক্ষ জানায় ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের হলিউড সাইনে সত্যিই কি আগুন লেগেছে?
এ বিষয়ে গুগলে সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গতকাল রাত ১১টা ২৭ মিনিটে প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমটি হলিউড সাইন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জেফ জারিনামের বরাত দিয়ে জানায়, হলিউড সাইন এখনো ঠিক এবং অক্ষত অবস্থায় আছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
এ ছাড়া, হলিউড সাইনের ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে হলিউড সাইনে আগুন লাগতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এটা নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের হলিউড সাইন আগুনে পোড়েনি এবং একই দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।